খুলনায় গভীর নলকূপের সঙ্গে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর প্রক্রিয়া বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পে এবং অবকাঠামো নির্মাণ কাজেও সাব-মার্সিবল পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়। এতে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। ফলে চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। খুলনা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এপ্রিলের শুরুতে বিভিন্ন পয়েন্টের পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে দৌলতপুর নয়াবাটি, মুজগুন্নির আশপাশ এলাকায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে নগরীতে রেকর্ড ৩১ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে গিয়েছিল। এ বছরও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা, নবীনগর, শেখপাড়া, গোবরচাকা, নবপল্লী, টুটপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন মেটাতে অনেকে বোতলজাত পানি কিনে পান করছেন। পরিবেশ সচেতন নাগরিক সংগঠন ‘পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ জানান, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে খুলনা ওয়াসা মধুমতি নদী থেকে পাইপলাইনে পানি এনে নগরবাসীর সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তা প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এ ছাড়া দখলে-দূষণে ও পানির প্রবাহ না থাকায় ময়ূর নদ শুকিয়ে মরতে বসেছে। শহরে ব্যক্তিগত ও সামাজিক মালিকানায় পুকুর আছে হাতে গোনা কয়েকটি। ফলে একদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ করতে রিচার্জিং (পুনর্ভরণ) ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে।
অন্যদিকে অব্যাহতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি টেনে তোলায় ভূগর্ভে লবণাক্ত পানির স্তর মিষ্টি পানির স্তরের সঙ্গে মিশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে নগরীতে ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে ওয়াসা মাত্র ৭ লাখ মানুষকে পানির সুবিধা দিতে সক্ষম। খুলনা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ওয়াসার ৪০ হাজার হাউস কালেকশন আছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার উৎপাদক নলকূপগুলোয়ও মাঝেমধ্যে পানি উঠছে না। যেখানে সেখানে সাব-মার্সিবলের কারণে আশপাশের বড় একটা এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে এ অবস্থা নিরসনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ। গতকাল খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির কথা বলা হয়। তারা বলেন, পানির সমস্যা সমাধানে ময়ূর নদ ঘিরে মিষ্টি পানির আধার গড়ে তুলতে হবে। এর পানি শোধনের মাধ্যমে ব্যবহার-উপযোগী করে তুলতে হবে। পানির অপচয় রোধে অনুমোদিত ভবন নির্মাণের কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বহুতল ভবনে উৎপাদক নলকূপের ওপর বেশি হারে কর নির্ধারণ ও সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘খুলনা ওয়াসা এ ক্ষেত্রে দুটি পানির লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করতে পারে। একটি খাবার পানির, অন্যটি গৃহস্থালি কাজের। এতে ভূর্গভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
Leave a Reply