চিকিৎসা করাতে ভারতে নিয়ে গিয়ে কাশেম আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে একটি দুষ্টচক্র। এ অভিযোগে ঢাকার আশুলিয়ায় মোসা: বিউটি বেগম নামে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করে অভিযুক্তকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সোমবার রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম। এর আগে একইদিন দুপুরে আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকা থেকে বিউটি বেগমকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩।
গ্রেফতার বিউটি বেগম নাটোর সদর উপজেলার কালীবাড়ি এলাকার মৃত বিনসের আলীর মেয়ে। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন – একই এলাকার ইসলাম ব্যাপারীর ছেলে ও গ্রেফতার বিউটির স্বামী মো: শহিদ (৪৫) ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার পাইকপাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে শেখ ফরিদ (৪২)। তারা উভয়ে পলাতক রয়েছেন।
ভুক্তভোগী কাশেম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহাট গ্রামের মো: হাফিজার রহমানের ছেলে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সেবা-শুশ্রূষার জন্য আশুলিয়ায় স্ত্রী ববিতা বেগমের কাছে আসেন তিনি।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পূর্বপরিচিত বিউটি বেগম আবুল কাশেমের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে চিকিৎসা করানোর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। একই সাথে ভারতে নিয়ে ভাল চিকিৎসার প্রলোভন দেখান। বিউটি বেগম নিজের পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজ দেখিয়ে তার ভারতে যাতায়াতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিউটি বেগমের ওপর আস্থা রেখে উন্নত চিকিৎসার লোভে নিজেরাও পাসপোর্ট ও ভিসা করেন আবুল কাশেম দম্পতি। পরে বিউটি বেগম যশোর বর্ডার দিয়ে তাদের ভারতে নিয়ে যান।
ভারতের অজ্ঞাতস্থানে রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ডাক্তার দেখানোর জন্য ঘোরাঘুরি করেন। পরে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে কলকাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে নিয়ে কাশেম আলীকে অপারেশন করান বিউটি বেগম ও পলাতক আসামিরা। জ্ঞান ফিরে কাশেম আলী দেখতে পান তার পেটের বাম পাশের অংশ কাটা। পরে কর্তব্যরত ডাক্তারকে ভুক্তভোগী কাশেম জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার জানান, তিনি নাকি স্বেচ্ছায় কিডনি দান করেছেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজনদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে দেশে-বিদেশে দীর্ঘদিন যাবত মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে আসছিল।
কাশেম আলী বলেন, ‘আমি আসামিদের কাছে আমার কিডনির কথা জানতে চাইলে আমাকে ও আমার
স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে ফিরে আমি গত ২ এপ্রিল র্যাব-৩-এর কাছে আইনি সহায়তা চাই। সে অভিযোগের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে বিউটিকে গ্রেফতার করে র্যাব। আমার অনুমতি ছাড়াই প্রতারণা করে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে বিউটিরা। আমি তাদের বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে গ্রেফতার করে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-৩। মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন অনুযায়ী ও প্রতারণার অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply