রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘জোহা স্মারক বক্তৃতা ২০২২’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মানব-হিতৈষণা’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন।
রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর হাসান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং পৃষ্ঠপোষক উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামও বক্তৃতা করেন।
স্মারক বক্তৃতায় ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, “যাদের আত্মত্যাগ ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে অগ্নিগর্ভ করে তুলেছিল তাদের অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। এই গণঅভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান নতিস্বীকার করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেঁচে ছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। কিন্তু ঘাতকের হাতে অকাল প্রয়াণের পূর্বেই তিনি বাঙালির সবচেয়ে গৌরবজনক, সবচেয়ে আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন যেটি হলো বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ২৬ শে মার্চ তিনি যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন তার বয়স ছিল ৫১ বছর। পরবর্তী সময়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ৩ বছর ৭ মাস ৮ দিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন তার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দিতে। তার গৃহীত নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষাবিদ, প্রশাসক, অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমন্বিত করেছেন। এত অল্প সময়ে বহু কাজ তিনি সম্পন্ন করেছেন যার সংখ্যা ও ব্যাপ্তি আমাদের বিস্মিত করে। এর সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের অভিপ্রায় ও স্বপ্নের অংশ যা অসমাপ্ত থেকে গেছে।
তার জীবনব্যাপী সাধনা ও সংগ্রামের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে-অথবা বলা যায় মূল প্রবণতা মানব-হিতৈষণা। বালক বয়সে মুসলিম সেবা সমিতি গঠন, কলকাতায় এবং পরবর্তী জীবনে দাঙ্গাবিরোধী কঠোর অবস্থান, জিন্নাহ ফান্ডের নামে জেলে, মাঝি, কৃষক ও সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিজের ছাত্রত্ব বিসর্জন-এ ধরনের অনেক উদাহরণ আমরা দেখি।”
তিনি আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জনকল্যাণ চিন্তা ও দর্শন এবং এর সঙ্গে যুক্ত শান্তির অন্বেষণ আজ বহুমেরু বিশ্বেও গুরুত্ববহ। বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও ক্ষুধা-দারিদ্রহীন পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম, আন্দোলন ও ত্যাগের বহুমাত্রিকতা আজও বিশ্ববাসী পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন অধ্যয়ন তাই একবিংশ শতাব্দীতে নতুন আলোকসম্পাত ঘটাতে পারে। সেজন্যই বঙ্গবন্ধুর জীবনকে সামগ্রিকভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি। আন্দোলন-সংগ্রামের শুরু থেকে শাহাদতবরণের পূর্ব পর্যন্ত তার রাজনৈতিক দর্শনের মূলে যেমন ছিল বাঙালির মুক্তির স্বপ্ন তেমনি মানবতাবাদী জীবন দর্শন এর সামগ্রিকতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর মানব-হিতৈষণার এই দিকটি যথাযথভাবে অনুধাবন করা গেলে তার স্বপ্ন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতার মানবিক দিকটিও আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে।”
স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। সেখানে শহীদের জীবনালেখ্যও উপস্থাপন করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা এম তারেক নূর, অনুষদ অধিকর্তা, রসায়ন বিভাগসহ অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply