প্রস্টেট ক্যানসার সাধারণত প্রস্টেট গ্রন্থিতে হয়ে থাকে। এটি সুপারির আকারে মতো হয়। এ থেকে এক ধরনের রস নিঃসৃত হয়। এ রস শুক্রাণুর পুষ্টিতে সহায়তা ও যাতায়াতে সাহায্য করে। পুরুষের যত ধরনের ক্যানসার হয়, এর মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসার অন্যতম। কোনো কোনো প্রস্টেট ক্যানসারের গতি হয় ধীর। এতে তেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কোনোটি আবার মারাত্মক হতে পারে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণ : প্রাথমিক অবস্থায় এ ক্যানসারের কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার পর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হলো- প্রস্রাব করতে অসুবিধা, প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শুক্রাণুর সঙ্গে রক্ত যাওয়া, তলপেট ও হাড়ব্যথা। কী কারণে প্রস্টেট ক্যানসার হয়ে থাকে, তা আজও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অজানা।
ঝুঁকি : বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। যদি কোনো পরিবারের কারও এ ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ওই পরিবারের মানুষের এ ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : প্রস্টেট ক্যানসার আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রক্ত কিংবা লসিকা রসের মাধ্যমে শরীরের হাড় কিংবা অন্যান্য অঙ্গে ছড়ায়। যখন শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, তখনো এর চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে নির্মূল করা যায় না।
প্রস্টেট ক্যানসার ও এর চিকিৎসা : উভয়ই প্রস্রাব ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে। এ ক্যানসারের কারণে বা চিকিৎসা সার্জারি, রেডিয়েশন বা হরমোন চিকিৎসা কারণে পুরুষাঙ্গ দুর্বল হতে পারে। ওষুধ কিংবা সার্জারি করে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। প্রস্টেট ক্যানসার খুঁজে বের করতে হয় বিশেষ উপায়ে। যেমন- আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করা। ডাক্তার গ্লাভস পরে আঙুলে পিচ্ছিল পদার্থ মেখে তা পায়ুপথে ঢুকিয়ে প্রস্টেট পরীক্ষা করে থাকেন। কারণ প্রস্টেট পায়ুপথের খুব কাছেই থাকে। প্রস্টেটের সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন রোগীর শিরা থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
ক্যানসার নির্ণয় : ডাক্তার আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করে প্রস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ বুঝে যেসব পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, তা হলো-
আলট্রসাউন্ড : প্রাথমিক পরীক্ষায় ক্যানসার সন্দেহ হলে প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে বায়োপসি নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। ডাক্তার যদি মনে করেন ক্যানসার আশপাশে বিস্তার লাভ করেছে, তাহলে আরও পরীক্ষা দিতে পারেন। যেমন- বোনস্ক্যান, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই। পরীক্ষা শেষে ক্যানসারের স্টেজ নির্ধারণ করা যায়। এটা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সাহায্য করে থাকে।
চিকিৎসা : যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় ক্যানসার বিস্তার লাভ করেছে, তাহলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে দরকার পড়বে সার্জারি বা রেডিয়েশন। সার্জারিতে বিশেষ করে প্রস্টেট অপসারণ করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তির মাধ্যমে ক্যানসার কোষ মেরে ফেলা হয়। রেডিয়েশন থেরাপি দুভাবে দেওয়া যেতে পারে- শরীরের বাইরে ও ভেতর থেকে। এ পদ্ধতিতে অনেকটি চালের মতো আকারে রেডিয়েশন কার্যক্ষমতাসম্পন্ন বস্তু প্রস্টেট অন্তরে রাখা হয়। হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়, যাতে শরীরে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন নিঃসৃত না হয়। টেস্টোস্টেরনের হরমোন প্রস্টেট ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। ক্যানসার কোষ ধ্বংসকারী ওষুধ প্রয়োগে ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতির নাম কেমোথেরাপি। এটি রোগ নিরাময়ে এবং পেলিয়েটিভ কেমোথেরাপি হতে পারে।
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট এবং অধ্যাপক ও প্রধান
অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাভার
Leave a Reply