আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শ্রেণীর সব ক্লাসই চলবে। দীর্ঘ দুই বছর পর স্বরূপে ফিরছে শিক্ষাঙ্গন। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে একযোগে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও গত দুই বছরে কয়েক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল কিন্তু তখনো সব শ্রেণীর সব শিক্ষার্থী সশরীরে ক্লাসে আসার সুযোগ পায়নি। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সব শ্রেণীর সব শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই বছর পর ফের আগের রূপে ফিরছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘ দিন ধরেই করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে শ্রেণী কার্যক্রম চলছিল। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের মতোই শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
যদিও দুই বছর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর অনলাইনে চলতে থাকে সব শিক্ষাকার্যক্রম। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় হাঁপিয়ে ওঠেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপর বিভিন্ন সময় স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার দাবি ওঠে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এক মাস পর ২২ ফেব্রুয়ারি শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাস চালু করা হয়। এরপর ২ মার্চ সীমিত আকারে প্রাথমিক স্তরে পাঠদান শুরু হয়।
এ দিকে রাজধানীতে গত শনিবার একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ১৫ মার্চ থেকে শুরু হবে। শিক্ষামন্ত্রী ওই দিন আরো বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি দূর হবে। প্রতিদিনের লেখাপড়া প্রতিদিনই মূল্যায়ন করা হবে।
অন্য দিকে গত সপ্তাহে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শ্রেণী কার্যক্রমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিনুল ইসলাম খান জানান, প্রাথমিক স্তরে ক্লাস চলছে পুরোদমে। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ছয় দিনই স্কুলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস উন্মুক্ত করতে সময় নেয়া হয়েছে। এখন তাদের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বার খুলে দেয়া হবে। ১৫ মার্চ থেকেই তাদের সশরীরে ক্লাস নেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোদমে ক্লাস শুরুর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকার আওতায় আনা। প্রথমে সারা দেশে এক কোটি ২৯ লাখ শিক্ষার্থী ছিল এই ক্লাবে। পরে সেখানে আরো ১০ লাখ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়। এ ছাড়া সংক্রমণ পরিস্থিতি দুই শতাংশের মধ্যে নেমে আসার দিকেও লক্ষ রাখা হয়েছিল। গত রোববার (১৩ মার্চ) দেশে সন্দেহভাজনদের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত কয়েক দিনে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত মনে হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র জানায়, সারা দেশে ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী আছে। ৯ মার্চের তথ্য অনুযায়ী তাদের মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০ জনকে দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আর প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৮০৩ জনকে। অর্থাৎ প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ আর ৮০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছে। তবে গত পাঁচ দিনে এই সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে একটি সময়ের পার্থক্য থাকতে হয়। এটা মানতে গিয়ে সবাইকে দ্রুত টিকা দেয়া যাচ্ছে না। তবে যারা টিকা পাচ্ছে তারা নিয়মিত ক্লাস করবে। পাশাপাশি অনলাইন ও দূরশিক্ষণের ব্যবস্থাও চালু থাকছে। এ দিকে এবারে রোজার ছুটি কমানো হয়েছে। অন্যান্য বছর প্রথম রোজা থেকেই স্কুল বন্ধ করে দেয়া হতো। কিন্তু এ বছর ২০ রোজা পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।
Leave a Reply