রাজশাহীর অঞ্চলের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষি পেশার ওপর নির্ভরশীল। উপজেলার গ্রামের প্রায় মাঝখান দিয়ে একে বেকে বয়ে চলেছে নদী-নালা ও ডোবা। বর্তমান সময়ে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন বা অতি প্রাচীন বেশ কিছু কৃষি কাজের যন্ত্রাংশ। এর মধ্যে ফসলে পানি সেচের আদি যন্ত্র জাঁত। অঞ্চল ভেদে যার বিভিন্ন নাম থাকলেও রাজশাহীর কৃষকরা একে জাঁত বলেই চেনেন। এককালে এই জাঁতের ব্যবহার ছিল প্রায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন জাঁত চলে গেছে জাদুঘরে। কৃষক হয়ে পড়েছে যন্ত্রনির্ভর।
মেশিন ষ্টাট দিলে অথবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করলেই ওঠছে পানি। শুধু পানি উত্তোলনই নয়। আধুনিক কৃষি কাজের ষাট, সত্তর ভাগ হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। তারপরও মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে কৃষিকাজে ব্যবহায্য আদি এই যন্ত্রের।
কৃষিকাজে আদি দেশীয় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, অভাবের কারণে নয় শখের বসে এবং আদি ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যই তারা এসব যন্ত্রের ব্যবহার চালু রেখেছেন। জমি চাষ ও চারা রোপন সব কিছুই তারা শ্রমিক দিয়ে করেছেন।
এখন সেচের কাজটি তারা মেশিন দিয়ে না করে নিজেরাই জাঁতের মাধ্যমে করছেন। তাদের মতে, জাঁত দিয়ে অতি দ্রুত সেচ দেওয়া যায়। এতে তাদের এক প্রকার ব্যায়াম হচ্ছে। আগে তারা প্রচুর পরিশ্রম করত। সেই তুলনায় এখন তাদের পরিশ্রম অনেক কমে গেছে। মূলত শ্রম বাড়াতে ও কাজের মধ্যে থাকতেই তারা বোরোর জমিতে সেচের জন্য জাঁতের ব্যবহার ধরে রেখেছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বাংলার কৃষির আদি ঐতিহ্য অনেক কৃষক এখনও শখের বসে কিছু যন্ত্র ধরে রেখেছেন। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে এসব আদি যন্ত্র একটি শিক্ষনীয় বিষয়। শখের বসে এসব আদি যন্ত্রের ব্যবহার কৃষিতে কৃষকের আগ্রহ ও ভালবাসার বহি:প্রকাশ। শুধু এসব আদি যন্ত্রপাতি নয় কৃষক এখন বিষমুক্ত বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে বিভিন্ন দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। যা মানব স্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।
Leave a Reply