কারও প্রতি শত্রুতাভাব বজায় রাখার নাম বিদ্বেষ। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মানসিক অসুস্থতার শামিল। ইসলামে পারস্পরিক বিদ্বেষ পোষণ করা হারাম। হাদিসে বলা আছে, ‘তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, তার মধ্যে একজন হচ্ছে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি।’
হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো পেশ করা হয় এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহ খাতা মাফ করে দেওয়া হয়; কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তাদের ছেড়ে দাও, যেন তারা ফিরে আসে অর্থাৎ মিলে যায়।’ মুসলিম।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।
হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, নিজের জিব আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থাক এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর। মিশকাত।
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দ্বিমুখী, কিয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের দুটি জিব হবে।’ দারেমি, মিশকাত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভর্ৎসনাকারী, অভিসম্পাৎকারী, অশ্লীল গালমন্দকারী ও নির্লজ্জ হতে পারে না।’ মিশকাত।
হজরত উবাদাহ বিন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘১. তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। ২. যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ করবে। ৩. যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় করবে। ৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। ৫. নিজের দৃষ্টি অবনমিত রাখবে এবং ৬. নিজের হাতকে (অন্যায় কাজ থেকে) বিরত রাখবে।’ আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কারও সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা হতে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা। কারও কোনো দোষের কথা জানতে চেষ্টা কোরো না। গোয়েন্দাগিরি কোরো না, ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি কোরো না, পরস্পর হিংসা রেখ না, পরস্পর শত্রুতা কোরো না এবং একে অন্যের পেছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘পরস্পর লোভ-লালসা কোরো না।’ মিশকাত।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
Leave a Reply