তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, সিরিয়ার আসাদ সরকারকে বড় ধাক্কা দেয়া হয়েছে। সিরিয়াযুদ্ধে শত্রুপক্ষের দুই হাজার ১০০ এরও বেশি সেনা নিহত হয়েছে, ৯৪টি ট্যাঙ্ক ও অস্ত্রসজ্জিত একটি সাঁজোয়াসহ ৩০০টি গাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ডলমাবাচি অফিসে ইস্তাম্বুলের আইন প্রণেতাদের সাথে দলীয় বৈঠককালে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এরদোগান বলেন, ইদলিব অভিযানে আমাদের শহীদের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ এ উন্নীত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শহীদরা সেই পয়েন্টে, যেখানে জাতিকে একটি স্বদেশভূমি উপহার দেয়ার সংগ্রাম রয়েছে। এই অঞ্চলে বসবাসরত এবং অন্যান্য জায়গা থেকে পালিয়ে আসা চার মিলিয়ন মানুষ এখন আসাদ সরকারের শোষণের রক্তাক্ত হামলার কারণে আমাদের সীমানায় চলে এসেছে। এর মধ্যে দেড় মিলিয়ন বর্তমানে আমাদের সীমান্তে রয়েছে। আমরা এই মানুষগুলোর জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির এবং এ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি।
এরদোগান বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা যখন বিশেষ লড়াই চালাচ্ছি, তখন আমরা যে পরামর্শগুলো এখানে করব তা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আফসোস করছি তাদের জন্য, যারা রাজনীতিতে, মিডিয়াতে বা অন্যান্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আছেন, এখনো সিরিয়ায় আমাদের দেশের সংগ্রামের অর্থ বুঝতে পারেন না। আমরা এমন ব্যবস্থা নিয়েছি যে, সন্ত্রাসী সংগঠনটি যেন মাঠে থাকতে পারে না। সন্ত্রাসী সংস্থাগুলো আমাদের নাগরিকদের শোষণ করেছে, এমন সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা এই পদক্ষেপগুলোর ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি।
তিনি বলেন, আল্লাহর সাহায্য ও আমাদের জাতির সহায়তায় আমরা একে অপরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অগ্রসরতার পথ অব্যাহত রেখেছি। তারা সুলতান মসজিদটি তিন দিন এবং তিন রাত দখল করে রেখেছিল এবং আমরা সেখান থেকে বিয়ারের বোতল সংগ্রহ করেছিলাম। আমাদের এসব অভিজ্ঞতাও আছে। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিলম্ব অনুভব করছি। তবে আমরা কখনই আমাদের দেশকে মাটিচাপা দিতে এবং পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেইনি। ইদলিব ইস্যুটি এমন একটি বিষয় হিসেবে আমাদের সামনে এসেছিল যা বিশেষত কল্পিত এবং অন্যান্য সাফল্যগুলো কেড়ে নিতে উসকে দেয়।
ইউরোপগামী সিরীয় শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুরস্ক। নারী ও শিশুসহ শত শত শরণার্থী দেশটির উত্তরপশ্চিম সীমান্তের দিকে রওনা হয়েছেন। বুলগেরিয়া ও গ্রিস হয়ে তারা ইউরোপের উন্নত দেশে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন। শরণার্থীদের দলে সিরীয়, ইরানি, ইরাকি, পাকিস্তানি এবং মরোক্কানরা আছেন। তুরস্কের সেনাঘাঁটিতে হামলার পর শুক্রবার এরদোগানের দলের মুখপাত্র ওমর কেলিক সিএনএন তুর্ককে বলেন, তুরস্কের পক্ষে শরণার্থীদের ‘আর ধরে রাখা সম্ভব না। ওই হামলার কারণেই তুরস্কের শরণার্থীরা ইউরোপে রওনা হয়েছেন। এ ছাড়া যেসব শরণার্থী এখনো সিরিয়ায় আছে, তারাও তুরস্কে আসতে শুরু করেছেন। আমাদের শরণার্থী নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, সেটা আগের মতোই আছে। কিন্তু এখন আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি যে, আমাদের পক্ষে আর তাদের ধরে রাখা সম্ভব না।’
জাহাজভর্তি যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে রাশিয়া : সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে- যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধে জড়াতে পারে দেশ দু’টি। তুরস্কের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে যেন সব পদক্ষেপ নেয়া যায় সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ প্রশাসন। এর আগে শুক্রবার তুরস্কের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কায় ভূমধ্যসাগরে দু’টি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ পাঠায় রাশিয়া। ওই দু’টি জাহাজে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। এবার তুরস্ককে রুখতে ভূমধ্যসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে রাশিয়ার আরো একটি জাহাজ। এই জাহাজে করে আরো সামরিক অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সিরিয়ায় পাঠাচ্ছে মস্কো। এসব অস্ত্রের মধ্যে আছেÑ গোলাবারুদ, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও আরটি।
Leave a Reply