পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইতোমধ্যে একাধিক কমিটি গঠনের কাজও এগিয়ে গেছে। তবে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। বিশেষ করে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতেই ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন) পদ্ধতি বাদ দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। একই সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়লগুলোতে ভর্তির কার্যক্রম শেষ না করা পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন কোনোমতেই তাদের ভর্তির কাজ শুরু না করে সে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমন্বিত বা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় আগ্রহী না হওয়ায় ইউজিসির প্রথম দফার উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। তবে অন্য ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এখন চারটি ধাপে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউজিসিতে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সমন্বয়ে একাধিক টিম বা কমিটি গঠন করে কিভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে এ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যায় সে বিষয়ে ওই সভায় আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এ বছর হচ্ছে না, তাই এর পরিবর্তে সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গুচ্ছ ভিত্তিতে এ বছর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। সমমনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চারটি গুচ্ছে ভাগ করে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি গুচ্ছ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি গুচ্ছ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি গুচ্ছ এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। এর মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কলা, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান বিভাগের একটি করে পৃথক তিনটি পরীক্ষা নেয়া হবে। অন্য তিনটি ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রত্যেকটির জন্য একটি করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থী বিভাগ বা গ্রুপ পরিবর্তন করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ পরীক্ষায়। যদিও ১৯৭৩-এর আদেশে চলা চার বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আগেই জানিয়েছে, তারা ইউজিসির কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর মধ্যে ৩৯টিতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। এগুলোতে আসন আছে প্রায় ৬০ হাজার। ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে সমন্বিত বা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি। যেখানে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে আলাদা তিনটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা ছিল; কিন্তু পরে এটি নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়ায় এখন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির সদস্য মো: আলামগীর হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মার্চের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করব। ওই বৈঠকে একাধিক উপকমিটি তৈরি করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ন, ফলাফল প্রকাশসহ যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আগের মতো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেয়া হবে। আবেদনকারীদের রোল নম্বর অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করে সে অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে সব কিছু কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপকমিটির সদস্যদের তত্ত্বাববধানে পরিচালিত হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভিসি অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, আগের বছরে দেখা গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয়। এতে পরবর্তী সময়ে অনেক আসন তাদের খালি হয়ে যায়। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন আগে শিক্ষার্থী ভর্তি না করে সে বিষয়েও কমিটি নজর দেবে।
শিক্ষার্থী ও অনেক অভিভাবকও মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা একটি ভালো উদ্যোগ। কারণ, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। প্রতি বছর মেডিক্যাল কলেজগুলোয় এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়। এমনকি গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে।
Leave a Reply