প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিতে যাচ্ছেন। ১২ মার্চ তার দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে চায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, সরাসরি শিপিং লাইন চালু, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনে টেকসই উন্নয়ন, আইসিটি
ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রীর আমিরাত সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুুল মোমেন এসব তথ্য জানান।
আমিরাত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। সফরে তিনি আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাস আল খাইমাতে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’-এর নতুন ক্যাম্পাসে একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ সফরে আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যা একটি দুর্লভ সুযোগ। এ ছাড়া তিনি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখবেন, যেখানে গত বছর থেকে বাংলাদেশের সাফল্য সমগ্র বিশ্বের সামনে নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
সফরে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। তবে বাণিজ্য ঘাটতি এখনো দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মূল কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু জ্বালানি তেল আমদানি করি। রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য এই সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে। সে জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মোমেন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলাম, তখন এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তা আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আমিরাতের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে জয়েন্ট বিজনেস ফোরামের আয়োজন করা হবে। যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই লাভজনক হবে বলে আমি মনে করি। এতে সৃষ্টি হতে পারে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র। প্রধানমন্ত্রীর সফরে কয়টি এমওইউ হবে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, এ সফরে আমরা চারটির মতো এমওইউ করব। তবে কোন বিষয়গুলোয় এমওইউ করা হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি।
বাংলাদেশের জন্য আমিরাত কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এই একটি দেশ থেকেই বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। করোনাকালীন আমিরাত দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তার পরও আমাদের জন্য তাদের শ্রমবাজার আংশিক খুলে দিয়েছে দেশটি, যা একটি কূটনৈতিক সাফল্য। গত অর্থবছরে এই করোনার সময়েই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক আমিরাত গেছেন। আশা করছি, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
ড. মোমেন বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সলিড রিলেশন। তারা আমাদের অনেক সম্মান দেয়। প্রধানমন্ত্রীকে তারা এ সফরে সর্বোচ্চ সম্মান দেবে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করছি।
Leave a Reply