গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছিলেন সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ এক কলেজছাত্রী। গত পাঁচদিন ধরে অনশনের পর অবশেষে তার দাবি পূরণ হলো। দুই পক্ষের সম্মতিতে কাবিননামা সম্পাদনের পর অনশন ভাঙেন ওই ছাত্রী।
গতকাল শুক্রবার রাতে সাদুল্যাপুর শহরের রবি সাহার বাড়িতে কাবিননামা সম্পাদন করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পুজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সাদুল্যাপুর শহরের এক বাড়িতে বৈঠক করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই প্রেমিক জুটির বিয়ের জন্য কাবিননামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাদুল্যাপুর উপজেলার দায়িত্বরত হিন্দু রেজিষ্ট্রার অজিৎ কুমার মন্ডল এই কাবিননামা সম্পন্ন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-পুজা উৎযাপন পরিষদের নেতা রনজিত বকসী সূর্য, কুশধ্বস প্রামানিক, প্রভাত চন্দ্র অধিকারী, বাবলু সাহা, উত্তম সাহা, জয়ন্ত কুমার মণ্ডলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি।
এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা প্রভাত চন্দ্র অধিকারী বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য বৈঠক করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের সিদ্ধান্তে ছেলে শুভ সাহার ফুফু (পিসি)’র বাড়িতে ওই দুজনের বিয়ের জন্য কাবিননামা সম্পাদন করা হয়েছে। আগামী আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তিনদিন ধরে অনশন করেন ওই কলেজছাত্রী। এদিকে, প্রেমিকা বাড়িতে হাজির হওয়ার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় তার প্রেমিক।
জানা গেছে, রংপুর সরকারি কলেজে পড়ার সময় সাদুল্যাপুরের তাহেরপুর (সাহাপাড়া) গ্রামের দুলাল সাহার ছেলে শুভ সাহার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওই ছাত্রীর। তার দাবি, বিয়ের প্রলোভনে শুভ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও করেছেন। এইচএসসি পাসের পর তাদের বিয়ে করার কথা ছিল।
ওই ছাত্রী জানান, সদ্য প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফলে তারা দুজনই উত্তীর্ণ হন। এরপর শুভকে বিয়ের কথা বললে সে টালবাহানা করতে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রেমিকের বাড়িতে যান তিনি। সেখানে বিয়ের দাবিতে তিনদিন অবস্থান চলাকালে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় শুভ।
পরে এ পরিস্থিতিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে সালিস বসে শুভ সাহার বাড়িতে। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বাবাহারা ওই ছাত্রীর মা ছাড়া নিজস্ব লোকজন না থাকায় সুযোগ নেন সমাজপতিরা। শুভকে দিয়ে বিয়ে হবে না মর্মে একক সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবুও অনশন ছাড়েননি ওই ছাত্রী। হয় বিয়ে, না হয় আত্মহত্যা- এমন সিদ্ধান্ত অনড় রেখে প্রেমিকের বাড়িতে চলছিল তার অনশন।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে টনক নড়ে অনেকের। অবশেষে বিষয়টি নিরসনের জন্য তৃতীয় দফায় বৈঠক বসা হলে শুক্রবার রাতে দুই পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে প্রেমিক জুটির বিয়ের সিদ্ধান্তে কাবিননামা সম্পাদন করা হয়।
Leave a Reply