স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বাড়িঘর, কারখানা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাবর সম্পত্তির মালিকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরও এসব সম্পত্তির খোঁজ কেউ করেনি। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১৬ নম্বর আদেশে এসব সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে গেজেট প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে জাল দলিল ও নথিপত্র তৈরি করে জালিয়াতচক্র প্রচুর পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। এমন জালিয়াতি ঠেকাতে পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন ২০২১ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠছে আজ। আইনটি কার্যকর হলে পরিত্যক্ত বাড়ি বিষয়ে কোনো মামলা কোর্ট অব সেটেলমেন্ট ছাড়া অন্য কোনো দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন থাকলে তা অচল হয়ে যাবে; অর্থাৎ পরিত্যক্ত বাড়ি বিষয়ে মামলা নিষ্পত্তি হবে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে। এ জন্য কোনো আদেশ জারির প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া দেওয়ানি আদালতের রায়, আদেশ বা ডিক্রি অকার্যকর ও ফলবিহীন বলে গণ্য হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ রোববার সকাল ১০টায় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে যুক্ত হবেন।
মন্ত্রীপরিষদ সূত্র জানায়, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক ফরমান দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশগুলোকে আইনে পরিণত করার নির্দেশনা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। এ জন্য দ্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) অধ্যাদেশ ১৯৮৫-কে আইনে পরিণত করা উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। খসড়া আইনে অধ্যাদেশে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিত্যক্ত সম্পত্তির বিষয়ে প্রণীত আইনে আরো বলা হয়েছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে দখল গ্রহণ করা হয়েছে এমন বাড়ি আদালত কর্তৃক ফেরত প্রদান বা হস্তান্তরের আদেশ হলে দখলকালীন কোনো ভাড়া অথবা ক্ষতিপূরণের মামলা চলবে না।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো বাড়ির ওপর কোনো অধিকার কিংবা স্বার্থ আছে দাবিদার ব্যক্তি সরকারি গেজেটে তালিকাটি প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে ওই তালিকা থেকে ওই বাড়িটি বাদ দেয়ার জন্য কিংবা অন্য কোনো প্রতিকারের জন্য এ যুক্তিতে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে আবেদন করতে পারবেন যে, বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয় এবং রাষ্ট্রপতির আদেশের অধীনে এটি সরকারের কাছে অর্পিত হয়নি। কিংবা ওই আদেশের বিধানাবলি দ্বারা বাড়িটির ওপর তার স্বার্থ বা অধিকার ক্ষুন্ন হয়নি। তবে এর আগে যেসব বাড়ির মামলায় আদালত কর্তৃক সরকারের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেসব বাড়ির ক্ষেত্রে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে স্বার্থ দাবি করে কেউ মামলা করতে পারবে না।
কোর্ট অব সেটেলমেন্ট বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত এলাকা বা এলাকাগুলোর জন্য এক বা একাধিক কোর্ট অব সেটেলমেন্ট স্থাপন করতে পারবে। কোর্ট অব সেটেলমেন্টে একজন চেয়ারম্যান এবং দু’জন সদস্য থাকবেন। চেয়ারম্যান হবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বা অতিরিক্ত বিচারপতি পদে আছেন বা ছিলেন কিংবা ওই পদের যোগ্য। অপর দু’জন সদস্যের মধ্যে একজন হবেন বিচারিক কর্মকর্তা, যিনি অতিরিক্ত জেলা জজ পদে আছেন বা ছিলেন। আর অপর সদস্য হবে কমপক্ষে উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, দেশে ১০ হাজার ৩১৩টি সরকারি মালিকানাধীন বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এসব বাড়ির মধ্যে চার হাজার ৯৬২টি বিক্রয়যোগ্য এবং ১৩৮টি বাড়ি এরই মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ‘ক’ তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৮টি এবং ‘খ’ তালিকাভুক্ত এক হাজার ৪৩৯টি বাড়ি রয়েছে। এই দুই তালিকার বাড়ির মধ্যে চার হাজার ৭৮২টি বাড়ি বিক্রির এবং ২১৫টি সংরক্ষিত রাখার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
Leave a Reply