ব্রেইনে পানি জমা এবং মাথা বড় হওয়াকে ইংরেজিতে বলে Hydrocephalus. আমাদের ব্রেইনের গভীরে ভেন্ট্রিকল নামে এক ধরনের খালি জায়গা রয়েছে। যেখান থেকে তৈরি হয় CSF বা cerebrospinal fluid. একদিকে এ পানি যেমন তৈরি হয়, অন্যদিকে তা রক্তে শোধিত হয়। আর এ কারণেই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মগজে ১৫০ মিলি CSF জমা থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় মগজে CSF তৈরি হয় ৪৫০ মি.লি। বাকি অংশ রক্তে শোষিত হয়। কোনো কারণে CSF চলার পথে যদি Tumor, রক্তরক্ষণ বা জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন Hydrocephalus হয়। Hydrocephalus-এর প্রধান কারণ হলো- জন্মগতভাবে CSF Pathway বন্ধ থাকা, টিউমার, ব্রেইনে রক্তক্ষরণ এবং মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ।
জন্মগত বা Hydrocephalus অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো- Consanguinous marriage বা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে দেওয়া বা না করা।
সাধারণত Neural tube গর্ভাবস্থার ৪ সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়। Neural tube থেকে ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড ও স্পাইন তৈরি হয়।
মায়ের Folic acid নামক এক ধরনের ভিটামিনের অভাব হলে শিশুর Neural tube ক্রটিপূর্ণ হয়। Neural tube -এর development ক্রটিপূর্ণ হলে জন্মগত Hydrocephalus ও মেরুদণ্ডের জন্মগত টিউমার হয়।
হাইড্রোসেফালাস চেনার উপায় হলো- শিশুর মাথা ক্রমে বড় হতে থাকে। শিশুটি ক্রমে Irritable হতে থাকে। এ ছাড়া মেন্টাল রিটার্ডেশন থাকে। কোনো সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং খিঁচুনি হয়। তা ছাড়া রোগী মাথাব্যথা, বমি, চোখে ঝাপসা দেখে থাকে। Occipito Frontal circumference নরমালের চেয়ে বেশি থাকে। রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে আসতে থাকে। হাঁটতে গেলে Imbalance হয়। CT scan of brain করে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা হলো- Surgical Rt. Sided ventriculo peritoneal shunt ও Endoscopic third ventriculostomy.
মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি ও টিউমার : চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ভাষায় মেরুদণ্ডের ক্রটিকে বলা হয় Spinal dysraphysm. এটি তিন ধরনের হয়। যেমন- Myelomeningocele, Meningocele ও Spina bifida occulta. ব্রিটেনে প্রতি এক হাজারে দুজনের এ ক্রটি দেখা যায়। আমাদের দেশে এ রোগ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই। ফলে রোগটিতে কেন মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে, সে সম্পর্কেও কোনো বিশেষ ধারণা নেই। তবে রোগটি হওয়ার কারণ হিসেবে Folic acid নামে একধরনের ভিটামিনের অভাব বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া Consanguinous marriage বা রক্তের সর্ম্পকের মধ্যে বিয়ে উল্লেখযোগ্য এ ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ বলে দায়ী করা হয়। গর্ভবর্তী হওয়ার সময় যদি মা Sodium valproate নামে খিঁচুনির ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলেও সন্তানের এ রোগ হতে পারে বলে মনে করা হয়।
প্রতিরোধ : কথায় বলে Prevention is better than cure. যদি মা সন্তান গ্রহণের ৩ মাস আগে থেকে এবং গর্ভাবস্থায় Tab Folison ১টা করে দুবার খান, তা হলে এ রোগের প্রকোপ অনেকখানি কমে যেতে পারে। এ জন্য সন্তান নেওয়ার আগে দম্পতির চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বাংলাদেশে Consanguinous marriage বা রক্তের সম্পর্কের বিয়েপ্রথা খুবই বেশি। Consanguinous marriage নিরুৎসাহিত করতে পারলে এ রোগের প্রকোপসহ অনেক genetics disease থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হয়। আসুন, কিছু ক্ষেত্রে আমরা আরও সচেতন হই এবং জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকি।
লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ
Leave a Reply