1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগীর করণীয়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২

মাত্র পঁচিশ বছর বয়স তার। ফুটফুটে সহজ সরল নির্দোষ মুখশ্রী। শ্বাসকষ্ট নিয়েই চেম্বারে ঢুকল। মাত্র ছয় দিন আগে সিজারিয়ান অপারেশন করে প্রথম সন্তানের মা হয়েছে সে। তার মায়ের সাথে আলাপ করে জানা গেল, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসায় উন্নতি হওয়ায় ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যায়। শারীরিক পরীক্ষায় দেখা গেল, পায়ে পানি, দ্রুত হার্টবিট, রক্তচাপ খুব কম। দ্রুত সিসিইউতে ভর্তি হতে বললাম। বেডসাইড ইকো করে দেখা গেল, তার হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা খুবই কম, মাত্র ২৫ শতাংশ। প্রেশার বাড়াতে ইনজেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি হলো পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি। প্রতি এক হাজার প্রেগন্যান্সিতে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রেগন্যান্সির শেষ মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী পাঁচ মাস পর্যন্ত এ রোগ হতে পারে।

সমস্যা যেখানে : হার্ট হলো শরীরের কেন্দ্রীয় সেচ মেশিন বা পাম্পিং অর্গান। পুরো শরীরে অক্সিজেন ও খাদ্য পৌঁছে দেওয়াই তার কাজ। পাশাপাশি শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বয়ে নিয়ে ফুসফুসে পৌঁছে দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজগুলো করতে হার্টের দরকার শক্তিশালী বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাংসপেশি। এ মাংসপেশি অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত শক্তি প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ শরীরে পৌঁছে দেয় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা পালন করে। কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগে ঠিক এ মাংসপেশিগুলো আক্রান্ত হয়। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পাম্পিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রেশার কমে যায়। রোগী সহজে হাঁপিয়ে ওঠে, কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, শ্বাসকষ্ট হয়, স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। চিকিৎসা না হলে রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি হয়।

চিকিৎসা : মনে রাখা দরকার, হৃদযন্ত্রের মাংশপেশি দুর্বল হওয়ার আরও কারণ রয়েছে। যেমন- হার্টের নিজস্ব রক্তনালিতে চর্বি জমে বা ব্লক হয়ে মাংসপেশি ধ্বংস হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ ও রিং বা বাইপাস অপারেশনের মাধ্যমে ব্লক অপসারণ করে চিকিৎসা দিলে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হার্টের ভাল্ভ নষ্ট হয়েও হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বেলুন করে বা অপারেশনের মাধ্যমে ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা করলে পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণেও তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথির সুনির্দিষ্ট কারণই জানা নেই এখন পর্যন্ত। তাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাই এখন পর্যন্ত ভরসা। এ ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক বিশ্রাম খুব জরুরি। প্রেশার কমে গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে প্রেশার বাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তরল বা লিকুইড গ্রহণ কমিয়ে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি ডাইউরেটিকসের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে। প্রেশার মোটামুটি বজায় থাকলে জঅঅঝ ইষড়পশবৎং , গঈজ ইষড়পশবৎং জাতীয় ওষুধ দিয়ে পাম্পিং ক্ষমতা বাড়ানো যায়। নতুন ওষুধ ওাধনৎধফরহব, অজঘও প্রয়োগেও ভালো ফল পাওয়া যায়। উরমড়ীরহ প্রয়োগে রোগীর উপসর্গভিত্তিক উন্নতি হতে পারে। যেসব রোগীর পাম্পিং ক্ষমতা খুব কম, তাদের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে বা ব্রেইন স্ট্রোক করতে পারে। তাদের রক্তজমাটবিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

স্থায়ী সমাধান : মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথির এক-তৃতীয়াংশ রোগী সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হয়। তাই তাদের প্রাথমিক সাপোর্টিভ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য এক-তৃতীয়াংশ রোগী দীর্ঘস্থায়ী হার্ট ফেইলিউরে চলে যায়। ভালো হয়, খারাপ হয় এভাবে চলতে থাকে। যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ ভালো থাকার পূর্বশর্ত। বাকি এক-তৃতীয়াংশ রোগীর জন্য দুঃসংবাদ! এরা দ্রুত খারাপ হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও উপসর্গ শুরুর ছয় মাসের মধ্যে উন্নতি না হলে বুঝতে হবে এরা এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। তাদের বাঁচার একমাত্র উপায়- হার্ট প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা। উন্নত বিশ্বে যেখানে দুর্ঘটনাজনিত অকাল মৃত্যুর পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করা যায়, সেখানে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দুরূহপ্রাপ্তি। তবে এখন পর্যন্ত সেটাই ভালো চিকিৎসা।

প্রতিকারের উপায় : আগেই বলেছি, এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিলে বাকিদের চিকিৎসা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তাই উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। গর্ভকালীন শেষ মাস বা প্রসব পরবর্তী পাঁচ মাসের মধ্যে কোনো ধরনের শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত ইকোকার্ডিওগ্রাম করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আর হ্যাঁ, একবার যাদের কার্ডিওমায়োপ্যাথি হয়েছে, তারা কখনই সন্তান নেওয়ার ঝুঁকি নেবেন না। কারণ দ্বিতীয়বার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটাল, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com