ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে গতকাল সোমবারের ন্যায় আজও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লি।সিএএ’র বিরুদ্ধে ও পক্ষে করা বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে। এ ঘটনায় বহু জায়গায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের মাঝে অবাধে চলছে লুটপাট।
আনন্দবাজার, এনডিটিভিসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে,সোমবারের মতো মঙ্গলবারও উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে উত্তেজনা বজায় রয়েছে, চলছে অবাধে লুটপাট।
আজ সকালে মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীতে সিএএ সমর্থক ও বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একে অপরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। এ সময় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও। মৌজপুরে একটি ইলেকট্রিক রিকশায় ভাঙচুর চালানো হয়। রিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুট করা হয়।
খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)। তারা গিয়ে বেশ কিছু কার্তুজের খোসা উদ্ধার করেন। আপাতত সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানা গেছে।
মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি দিল্লির কারওয়াল নগরে। মঙ্গলবার ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও। তবে পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় এখনো পর্যন্ত সেখানে গিয়ে পৌঁছায়নি দমকলবাহিনী।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির দমকল বিভাগের ডিরেক্টরের তরফে জানানো হয়েছে, গতকাল থেকে এদিন ভোর ৩টা পর্যন্ত দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে তাদের কাছে ৪৫ বার ফোন এসেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারা।
দিল্লি পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা অব্যাহত রয়েছে বলে আমরা ফোনে একের পর এক অভিযোগ পাচ্ছি।’
সিএএ’র বিপক্ষে ও পক্ষে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় সোমবার দিল্লির একাধিক মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই সমস্ত স্টেশনে বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচলও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
সোমবার দিল্লির মৌজপুর, গোকুলপুরীসহ একাধিক এলাকায় সিএএ সমর্থক ও বিপক্ষের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সাতজন নিহত হয়েছেন। কাল পর্যন্ত চার জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। গতকালের সংঘর্ষে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আজ আভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে টুইট করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি লেখেন, ‘দিল্লির কিছু জায়গায় যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে আমি চিন্তিত। শহরের সর্বত্র যাতে শান্তি বজায় থাকে, একজোট হয়ে আমাদেরই তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সকলকে আমার অনুরোধ, হিংসা ত্যাগ করুন। যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানকার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসছি আমি। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা হবে।’’
গতকাল সোমবার ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ তিনি দিল্লিতে যাবেন। তার আগে দিল্লির এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি ভারতের জন্য অস্বস্তিকরই বটে।
Leave a Reply