২০২১ সালটাও করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে গেলেও বিদায়ী বছরটিতে তুলনামূলকভাবে লাভের মুখ বেশি দেখেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ যে ছয়টি কোম্পানির বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, এগুলোর মধ্যে পাঁচটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। আর মূলধনের শীর্ষে থাকা প্রথম দশটির মধ্যে সাতটিই হলো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বছরেও এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে তারা। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন-আজহারুল ইসলাম অভি
অ্যাপল
এক দশক ধরে বিশ্বের দামি কোম্পানির তকমাটি অ্যাপল নিজের করে রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিন ট্রিলিয়ন অর্থাৎ তিন লাখ কোটি ডলারের মূলধন স্পর্শ করতে যাচ্ছে অ্যাপল। এদিকে শেয়ারবাজারে অ্যাপলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুণ। বিনিয়োগকারীরা অ্যাপলের প্রতি তাদের আস্থা ধরে রাখছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। বর্তমানে অ্যাপলের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৭৫ ডলার ৭৪ সেন্ট। চলতি বছর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৮২ ডলার ৮৬ সেন্ট স্পর্শ করেছিল। টেক বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীর সময়ে প্রযুক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়া এই খাতে আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে দ্রুত। যেখানে মাত্র ১৬ মাসে অ্যাপেলের মূলধন দুই লাখ কোটি ডলার থেকে তিন লাখ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছায়, সেখানে এক লাখ কোটি ডলার থেকে দুই লাখ কোটি ডলারে অ্যাপলের পৌঁছাতে সময় লেগেছিল দুই বছর।
মাইক্রোসফট
কয়েক মাস আগেই অ্যাপলকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হয়ে গেছে মাইক্রোসফট। অনেক দিন ধরেই অ্যাপলের একেবারে কাছাকাছিই ছিল মাইক্রোসফট। ব্রিটিশ আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের ইকুইটি অ্যানালিস্ট সোফি লুন্ড-ইয়েটস বলেন, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন সমস্যা দেখা দিলে এফএএএনজি-ফ্যাং কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে অ্যাপল। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে ফেসবুক, অ্যাপল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, গুগল- এই পাঁচ কোম্পানি এফএএএনজি-ফ্যাং নামে পরিচিত। করোনার কারণে ক্লাউডভিত্তিক পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি হওয়ায় শুধু ২০২১ সালেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। গত জুনে প্রথমবারের মতো কোম্পানিটির বাজার মূলধন দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলার অতিক্রম করে।
অ্যালফাবেট
গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট। কোম্পানিটির বাজার মূলধন গত নভেম্বরের শুরুতে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে উঠেছে। তা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল এক ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে বাজার মূলধন এক লাখ কোটি ডলার হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিদায়ী বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে গুগলের ডিজিটাল পণ্য ও পরিষেবা পেতে ভোক্তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে বড় পরিবর্তন ঘটে।
অ্যামাজন
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের কোম্পানি অ্যামাজন গত তিন মাসে প্রায় ১১ হাজার ১০০ কোটি ডলার আয়ের কথা জানিয়েছে। গত তিন মাসে ওয়েব পরিষেবা, বিজ্ঞাপন ও প্রাইম সাবস্ক্রিপশন খাতের আয় প্রতিষ্ঠানটির খুচরা বিক্রিকে ছাড়িয়ে গেছে। বছরের শেষ দিকে অ্যামাজনের বাজার মূলধন বেড়ে প্রায় দুই ট্রিলিয়নের কাছাকাছি এসে যায়।
টেসলা
গত বছর থেকে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো লাভজনক হয়ে ওঠে। ফলে তাদের শেয়ার বেড়ে যায় বহুগুণ। কয়েক মাস আগে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ফার্ম হার্টজের কাছে এক লাখ গাড়ি বিক্রির চুক্তি করার পর টেসলার শেয়ার বেড়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। এতদিন এই তালিকায় ছিল অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও গুগলের মালিক অ্যালফাবেট। বছরের পর বছর ধরে গাড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করে আসছে টেসলা। তবে তারা এই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হবে বলেও অনুমান করেছিল বেশকিছু বিনিয়োগকারী। কিন্তু গত বছর থেকে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো লাভজনক হয়ে ওঠে। ফলে তাদের শেয়ার বেড়ে যায় বহুগুণ।
মেটা
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ২০২১ সালে হঠাৎই নাম পতিবর্তন করে হয়ে যায় ‘মেটা’। মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠিত মেটা বিদায়ী বছরের শুরুতে বাজার মূলধনে ওয়ান ট্রিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া হাজারো অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁসের কারণে চাপে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির স্টকের দামে তা খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
Leave a Reply