1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

বন্ধের পথে সৌদি শ্রমবাজার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মধ্যপ্রাচ্যে এখন একমাত্র সৌদি আরবেই বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে। তবে সেখানকার পরিবর্তিত রাষ্ট্রীয় নীতি এবং কর্মক্ষেত্রে অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার) কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই শ্রমবাজারের দ্বারও সঙ্কুচিত।

বর্তমানে ক্লিনার ও গৃহকর্মীর ভিসা ছাড়া অন্য পেশায় সৌদি আরবে কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। ফ্রি ভিসার নামে দালালদের খপ্পরে পড়ে কিছু লোক সৌদি আরব গেলেও কাজ না পাওয়া এবং অবৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ায় দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্য দিকে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীশ্রমিকদের সেখানে নানা নির্যাতনের অভিযোগ এবং দেশে ফিরে আসার খবরে এই পেশায়ও গমনের হার অনেক কমে গেছে।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সৌদি বাজারে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ কমে আসার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, নতুন করে শ্রমবাজার খোঁজার সুযোগ খুব একটা নেই। ওরা যে এখনো কিছু ভিসা দিচ্ছে এগুলো আমরা কায়দা করে বের করে আনছি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে মক্কার হজ অফিসে মতবিনিময়কালে গোলাম মসিহ সৌদি শ্রমবাজার পরিস্থিতির বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীদের ওপর ঢালাও নির্যাতনের অভিযোগের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, অভিযোগের সত্যতা থাকলেও এই হার অনেক কম। অদক্ষ, আরবি ভাষা না জানা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অতি বয়স্ক, অসুস্থ নারীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে পাঠানোর জন্য একশ্রেণীর অর্থলোভী রিক্রুটিং এজেন্সি এবং তাদের দালালদের দোষারোপ করেন তিনি। আর সেখানে যাওয়া নারীকর্মীদেরও একটা অংশ পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে না পারার কারণে দেশে ফেরার জন্য কোনো কোনো সময় নির্যাতনের অভিযোগ করে থাকেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

জানা যায়, সৌদি আরবে বর্তমানে ২২ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে আবার ৪ লাখ শ্রমিক আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এক সময় এই সংখ্যা ২৭ লাখ ছিল। শ্রমিকের দিক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির ৩০ লাখ শ্রমিক সেখানে কর্মরত। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান এবং ২৪ লাখ শ্রমিক নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে মিসর।

গোলাম মসিহ জানান, বাংলাদেশী শ্রমিক কমে যাওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সৌদি নাগরিকদের ঢোকানো হচ্ছে। ক্লিনার ছাড়া সৌদিরা এখন সব কাজই করছেন। সিডার নামে একটি ক্লিনিং কোম্পানির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ওখানে বাংলাদেশের ৩২ হাজার লোক কাজ করছে। প্রতিটি ব্লকে ১৭ জন করে লোক ছিল। একজন সুপারভাইজার এবং বাকি ১৬ জন ওয়ার্কার। সেখানে এখন লোক নামিয়ে আনা হয়েছে ৭ জনে। বাকিটা সব মেশিনে করে। আগে সবাই ঝাড়– দিত হাত দিয়ে। এখন ট্রাক দিয়ে ভ্যাকুয়াম করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। অটোমেশনের কারণে ৫০ ভাগ লোক কিন্তু এখানে কমে আসছে। প্রতি ব্লকে ৭ জন থেকে ৪ জনে নামিয়ে আনা হবে বলে ওখানকার জেনারেল ম্যানেজার জানান।

গোলাম মসিহ বলেন, ফ্রি ভিসার নামে যা করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো, এখানে এসে চাকরি পায় না তারা। পুলিশ ধরে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠায়। এদের লাইফ শেষ হয়ে যায়। দেখা গেল এভাবে এক শ’ জন আসে। তার মধ্যে যে টাকা দিয়ে আসে সেই টাকা তুলতে পারে হয়তো ভাগ্যক্রমে দুই- চারজন। বাকিরা পারে না। এই দুই-চার জনের সফলতার গল্প শুনেই অনেকে মনে করে তারা এসেও টাকা তুলতে পারবে।
নারীশ্রমিকদের ব্যাপারে তিনি জানান, আমার অভিজ্ঞতা হলো খারাপের চেয়ে ভালো।

এখানে বর্তমানে ২ লাখ ৫৩ হাজার নারীশ্রমিক কাজ করছেন। এ পর্যন্ত দেশে ফেরত গেছেন ১৭ হাজার। ফেরত যাওয়ারা যেভাবে অভিযোগ করছেন তাতে বিষয়টা বড় হয়ে ফুটে ওঠে। বিষয়টা নিয়ে সংসদেও আলোচনায় হয়। নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধের কথা আসে। তিনি বলেন, আমাকে এক এমপি বলেন, এসব বন্ধ করে দেন। আমি বলেছি, বন্ধ করা খুব সহজ। এই যে আড়াই লাখ মহিলা কাজ করছেন, বাংলাদেশে গেলে এরা কী করবে? আপনিতো চাকরি দিতে পারবেন না। এটাও বুঝতে হবে। দেশে ফিরে যাওয়ার এই হার প্রায় ৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, মহিলাদের অ্যাবিউজ হওয়ার কারণ হচ্ছে- সৌদি আরব প্রত্যেক নারীশ্রমিক নেয়ার জন্য ২ হাজার ডলার দেয়, যা প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। আমরা দেখলাম, যে মহিলা আসছে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ শ’ থেকে ৭ শ’ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে এজেন্টদের। এজেন্টরা গ্রাম থেকে একটি মহিলা এনে কোনো রকমে প্লেনে উঠিয়ে দেয়। দেখা যায়, এই মহিলা কিন্তু ঢাকা শহরও দেখেনি। সে এখানে আসে অ্যাবিউজ হয়।
সৌদিরা মনে করে এরা প্রশিক্ষিত একটা স্ট্যান্ডার্ড মহিলা পাচ্ছে। কিন্তু এরা এখানে এসে কোনো কথা বুঝে না। ভাষার সমস্যা। যখন একটা আনট্রেইনড, আনস্কিল্ড লোক পাঠাবে সেটা অ্যাবিউজতো হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন একটা মহিলাকে একদিন এক সৌদি নাগরিক আমাদের দূতাবাসে দিয়ে যায়। ওই মহিলা মাইক্রোওয়েব জীবনেও চালায়নি। দুই মিনিটের জায়গায় দুই ঘণ্টা দিয়ে রাখে। ফলে সেটির বিস্ফোরণ ঘটে বাড়িতে আগুন লেগে যায়। মহিলা বলছে, আমি আবার চাকরি করতে যাবো। কিন্তু বাড়ির মালিক বলছেন, তোমার আর চাকরি করার প্রয়োজন নেই।

গোলাম মসিহ বলেন, কিছু দিন আগে একটা অভিযোগ গেছে, এরকম ১২ বছরের মেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। মেয়েটি কিভাবে পাসপোর্ট পেল? মেয়েটি বোবা হয়ে গেছে। আবার ৬৫ বছরের মহিলা পাঠিয়েছে। অথচ নারীশ্রমিক ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। দেখা গেল অন্ধ মহিলা পাঠিয়েছে। প্যারালাইজড মহিলা পাঠিয়েছে। সিজারিয়ান হয়েছে সাত দিন, তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ত্রুটিগুলোতো সৌদি আরবের নয়, এগুলোতে আমাদের।

তিনি বলেন, নারী নির্যাতন বা অ্যাবিউজের বিষয়টি অস্বীকার করব না। তবে আমরা যদি হারটা দেখি সেটা অনেক কম। আমাদের সেইফ হোমে তিনজন গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন। দুই জনের বাচ্চা হয়েছে। দুইটাই দেখলাম বাঙালি ছেলের সাথে সম্পর্কের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, সৌদিয়ানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার প্রবণতাও আছে। এটা এ জন্য করে যে, তাকে যেন তাড়াতাড়ি দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটা মেয়ের ব্যাপার। সে বলেছে তাকে এয়ারপোর্টের ম্যানেজার ১২ দিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রোজার দিন। আমি সে বছর মাত্র জয়েন করি। ২৪-২৫ রোজার দিন ম্যানেজারকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেল। মেয়েটির দেশে চলে যাওয়ার প্রসেস চলছিল। তখন কোর্ট থেকে অর্ডার এলো তাকে এক বছর রাখতে হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং তার ডিএনএ টেস্ট হবে।

তখন মেয়েটি এটা জানার পর বলে, আমি দেশে যাওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলেছি। এরপর মহিলা পাগলের অভিনয় শুরু করল। তিনি জানান, বর্তমানে রেপ চার্জে মাত্র তিনজন সৌদি অ্যারেস্ট আছে। এই হার খুবই কম।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com