টেস্ট ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়নশিপে একমাত্র শিরোপাজয়ী দল নিউজিল্যান্ড। তাসমান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতো দেশটির কন্ডিশনও সফরকারীদের কাছে সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তার উপর গত পাঁচ বছর ধরে নিজেদের মাটিতে অপরাজিত তারা। একই সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সবশেষ হেরেছিল ১১ বছর আগে, তাও প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এমন কঠিন প্রতিপক্ষকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ। কিউইদের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। একই সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও এটি তাদের প্রথম জয়।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আগের ৯ টেস্টের সব কয়টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে পাঁচটিতে ইনিংস ব্যবধানে। শুধু তাই নয়, সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩২ ম্যাচের সব কয়টিতে হার। যার কারণে এবারও কঠিন এই প্রতিপক্ষের মাটিতে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে হয়তো বড় স্বপ্ন দেখতে চায়নি কেউ। তবে স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করেছে টাইগাররা। বল হাতে দুর্দান্ত সময়ের পর ব্যাট হাতেও দাপট দেখিয়েছেন তারা। পাঁচ দিনে হওয়া ১৩ সেশনের ১০টিতেই একক আধিপত্য দেখিয়েছে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হকরা।
আজ বুধবার ম্যাউন্ট ম্যাঙ্গানুইতে প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের স্নিগ্ধ সকালে মুগ্ধ করে বাংলাদেশের বোলাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৭ রান ও পাঁচ উইকেট হাতে রেখে দিন শুরু করা কিউইদের মাত্র ১০ ওভার ব্যাট করার সুযোগ দেন তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন। প্রথম ইনিংসে ৩২৮ এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। আর প্রথম ইনিংসে ৪৫৮ রান করা টাইগাররা পায় ৩৯ রানের লক্ষ্য, যা পেরোতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ১৬.৫ ওভারেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা।
কিউইদের দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে ভুল করে বসেন বাংলাদেশের ওপেনার সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে সহজে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। মাত্র তিন রান করে টিম সাউদি বাউন্সার ব্যাটের কানা লাগিয়ে উইকেট রক্ষকের গ্লাভসবন্দি করান তিনি। প্রথম ইনিংসে ওপেন করা মাহমুদুল হাসান জয় ইনজুরিতে পড়ায় এই দিন ওপেনিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে অধিনায়ক মুমিনুল হকের সঙ্গে দেখে শুনে ব্যাট চালিয়ে যান শান্ত। কিউই পেসারদের দ্বিমুখী আক্রমণের জবাবে ঠান্ডা মাথায় দৃঢ়তা দেখান তারা। সময় বাড়তে বাড়তে হাত খুলে শট খেলতে থাকেন মুমিনুল-শান্ত। এই যুগলের ৩১ রানের জুটি ভাঙেন কাইল জেমিসন। ৪১ বলে ১৭ রান করে স্লিপে থাকা রস টেইলরের দারুণ ক্যাচবন্দি হন এই ব্যাটার। যদিও নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে কোনো বেগ ছাড়াই জয় তুলে নেন ১৩ রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুল।
এর আগে দিনের শুরুতে কিউইদের ব্যাটিং শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। দেশের বাইরে প্রথম পেস বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ছয় উইকেট শিকারের মাইলফলকও স্পর্শ করেন এবাদত। দিনের শুরুতে অপরাজিত রস টেইলরের উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন এই পেসার। মাত্র ১০ ওভার চার বল খেলতেই ইনিংস গুটিয়ে যায় কিউইদের।
Leave a Reply