সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে স্বস্তিতে নেই নৌকার প্রার্থীরা। ঘাম ঝরানো প্রচারণাপর্ব শেষ করলেও বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দিচ্ছেন লড়াইয়ের আভাস। স্বতন্ত্র ব্যানারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতারা। কেউ কাউকে ছাড় দিতেও রাজি নয়। তবে- এ দু’টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভেতরে একতা থাকলে ভোটের আগেই অনেক ইউনিয়নে ফলাফল নিশ্চিত হওয়া যেতো। কিন্তু বিদ্রোহের কারণে নৌকার প্রার্থীদের লড়াই করতে হচ্ছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। আগামীকাল সিলেটের এ দু’টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে ঐক্যবদ্ধতার অভাব অনুভব করেছিলেন নির্বাচনের শুরুতে।
এ কারণে নৌকার বিরোধিতা করায় এ দু’টি উপজেলার ১৭ জন নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এরপরও নৌকার প্রার্থীদের পথ ততোটা মসৃণ হয়নি। প্রচারণায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান সহ কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিটি ইউনিয়নে ছুটে গেছেন। তারা নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে এসেছেন। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এবার নির্বাচন হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নেই কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- দলের স্থানীয় পর্যায়ের বিরোধের কারণে ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। আর ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার কারণেই নৌকার প্রার্থীরা তীব্র লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। এ উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী তমিজ উদ্দিন মেম্বার। পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র এরই মধ্যে তমিজ উদ্দিন বিতর্কিত হয়েছেন। ফলে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জামায়াত ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ফয়েজ আহমদও রয়েছেন সুসংহত অবস্থানে। লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ফারগুসন নানকা শক্তিশালী প্রার্থী হলেও জাতীয় প্রার্থীর প্রার্থী এডভোকেট আব্দুর রহমান ও জমিয়তের প্রার্থী জামাল উদ্দিন শেষ মুহূর্তে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী হোসেন কাজলের সঙ্গে বিদ্রোহী আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও আব্দুল বাছিতের মধ্যে লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। সাতবাঁক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানকে ছেড়ে কথা বলছেন না বিদ্রোহী আব্দুর নূর ও জামায়াত ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়ব শামীমও। বড় চতুল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মবশ্বির আলীর চাচাই। এ ইউনিয়নে ভোট ব্যাংক শক্তিশালী রয়েছে বিএনপি ঘরানার প্রার্থী আব্দুল মালিক চৌধুরী ও জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা আবুল হোসেনের। কানাইঘাট সদরে বিএনপি’র ঘরানার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদের অবস্থান এবারো শক্তিশালী। তবে- আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফসর আহমদ চৌধুরী ও বিদ্রোহী শামসুদ্দিন বাবুলও লড়াইয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দিতে পারলে কানাইঘাট সদরে জয় নিশ্চিত করা যেতো বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন ও বিদ্রোহী বাবুল রানার মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রচারণায় তিনজনই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী মাস্টার আবুবকর ও জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আজিজ এগিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সায়েম আহমদ এবার নতুন প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তার পরিচিতি কম। রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের ৭ বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা সবাই বহিষ্কৃৃত হয়েছেন। এরপরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিলাল আহমদ রয়েছেন আলোচনায়। তার সঙ্গে বিদ্রোহী এটিএম সোহেল রানা ও জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা শামসুল ইসলামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- বিদ্রোহী হওয়ার কারণে এবার কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৩ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বহিষ্কার হয়েছেন রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে। ফলে নির্বাচনে এই ইউনিয়নের দিকে নজর থাকবে সবার। কানাইঘাটের পার্শ্ববর্তী জকিগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা গতকাল তাদের প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন। জকিগঞ্জেও রয়েছে বিদ্রোহীদের দাপট। ভোটের প্রচারণায় তারাও সরগরম করে তুলেছিলেন মাঠ। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- জকিগঞ্জে বিদ্রোহী হওয়ায় ৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বারহাল ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মনজুরুল হামিদ চৌধুরীর সঙ্গে জামায়াত ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী লড়াই গড়ে তুলেছেন। এ ইউনিয়নে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। বীরশ্রী ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল সাত্তারের সঙ্গে ভোটের আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল সালাম চৌধুরী। কাজলসার ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল আম্বিয়া ও বিএনপি ঘরানার প্রার্থী চেরাগ আলীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী জুলকারনাইন লস্কর। খলাছড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কবির আহমদ। কিন্তু তুমুল আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হক। জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফতাব আহমদের সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান আহমদ। সুলতানপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরীকে সহজেই ছাড় দিচ্ছেন না বিদ্রোহী রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান আহমদ। বারঠাকুরী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মহসীন মর্তুজা টিপু ও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন ও আক্তার হোসেন রাজুও ভোট প্রচারণায় চমক দেখিয়েছেন। কসকনকপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজের মুখোমুখী হয়েছেন বিদ্রোহী আলতাফ হোসেন লস্কর ও স্বতন্ত্র আব্দুল মঈন। মানিকপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাফর মো. রায়হানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর শাহ্ চৌধুরী হেলাল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহতাব আহমদ চৌধুরী। ১৭ ইউনিয়নে নৌকার পেলেন যারা: সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নে গোলাম কিবরিয়া, সাদিপুরে সাহেদ আহমেদ মুছা, পশ্চিম পৈলনপুরে হান্নান মিয়া, বুরুঙ্গা বাজারে আখলাকুর রহমান, গোয়ালাবাজারে পীর মজনু মিয়া, তাজপুরে ফয়ছল হোসেন সুমন, দয়ামীরে হিরণ মিয়া ও উছমানপুরে ওয়ালীউল্লাহ বদরুলকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নে ফয়ছল আহমদ ও খাজাঞ্চীতে আরশ আলী গণি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নে জবরুল ইসলাম জগলু, তেতলীতে আতিকুর রহমান ও কামালবাজারে আব্দুর রবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পশ্চিম আলীরগাঁওয়ে গোলাম কিবরিয়া হেলালে এবং মধ্য জাফলংয়ে ফারুক আহমদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর (পশ্চিম) ইউপিতে আলকাছ আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
Leave a Reply