বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হলেও সরকারের সায় মেলেনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর থেকেই তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি জোরালো হয়। তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দলটির দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার ইচ্ছে করলেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু সরকার বলছে, পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে ৪০১ ধারার অধীনে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ওই ধারায় একবার মীমাংসিত ইস্যুতে নতুন আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। দুই পক্ষই ধারাটির ব্যাখ্যা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে, দিচ্ছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। বিএনপি এ নিয়ে মাঠে নানা কর্মসূচি পালন করছে। আর সরকার বলছে দলটি চিকিৎসা ইস্যুতে রাজনীতি করছে।
আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগতে থাকা খালেদা জিয়া ১০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে আইসিইউতে পর্যন্ত যেতে হয়। ৫৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাসায় ফেরেন।
১২ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে ছিলেন ২৬ দিন। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবর তার শরীর থেকে একটি লাম্প (ছোট মাংসের দলা) অপসারণ করা হয়। এর পর বায়োপসি পরীক্ষা করিয়ে সেখানে ক্যানসারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সবশেষ রক্তবমি হলে ১৩ নভেম্বর তৃতীয়বারের মতো খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। এবার হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ১৭ ও ২৩ নভেম্বর তার ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এখনো থেমে থেমে এ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এখন পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের উপক্রম দেখা দিলেই স্যালাইনের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর রক্তক্ষরণে তার হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। লিভার সিরোসিসের বাইরেও খালেদা জিয়া আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাপরবর্তী জটিলতা। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে খালেদা জিয়ার।
২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক ডা. এফএম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে জানান, বারবার রক্তক্ষরণ হওয়া বন্ধে ট্রান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিসটেমিক শান্ট করতে হবে। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে কিছু সেন্টার আছে। এর আগে ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তাকে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান।
এর পর থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে গণঅনশন, বিভাগ-জেলায় সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিএনপিপন্থি পেশাজীবীরাও খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছেন। ৬ মে করা খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনও সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
সবশেষ গত ১১ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তার ভাই। ওই আবেদনের বিষয়ে আইনি মতামত গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়।
Leave a Reply