অনুমতি ছাড়াই বদলে ফেলা হয় ‘এমভি অভিযান ১০’ লঞ্চের ইঞ্জিন। সেই ইঞ্জিনের ত্রুটি থেকেই প্রচ- উত্তাপের সৃষ্টি। আর সেই তাপ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার পরও যাত্রীদের সতর্ক করেনি লঞ্চে কর্তব্যরত কর্মীরা। যথেষ্ট সময় পেলেও যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি তারা। লঞ্চের মালিক থেকে শুরু করে মাস্টার, সুকানিসহ কর্মচারীদের সবার দায়িত্বহীনতার কারণে ঝরে গেছে ৪১ প্রাণ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটি এবং দায়িত্বশীলদের গাফিলতির তথ্য পেয়েছেন।
এদিকে পুড়ে অঙ্গার ৩০ জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। প্রিয়জনের চেনামুখগুলো অচেনা। পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কাতরাচ্ছে ১৫ জন। কয়েকজন এখনো নিখোঁজ। প্রিয়জনের মৃতদেহটা পেতে এখনো সুগন্ধার পাড়ে স্বজনদের ভিড়। ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্বজনদের কাছে ৩০টি পোড়া মুখ একেবারে অচেনা। শরীর পুড়ে অঙ্গার। বাকি শুধু কঙ্কালটুকু। যা দেখে পরিচয় নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। মৃতদেহ সংরক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় গণকবরে তাদের দাফন করা হয়েছে। প্রিয়জনকে শেষ বিদায়ে ছুঁয়ে দেখতে পারেনি স্বজনরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান-১০ পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তারা কয়েকটি লঞ্চের মাস্টারদের ডেকে তাদের মতামত জানতে চান। কমিটির সদস্যরা বলেন, ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনাগামী ওই লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত ইঞ্জিন রুমে। লঞ্চের দুটি ইঞ্জিনের একটির ছয়টি ইন্ডিকেটর কভারের মধ্যে ৩ নম্বর নাট (নজেল) ঢিলা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই ইঞ্জিনের ৬ নম্বর সিলিন্ডার হেডের কভার ভাঙা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে প্রচ- তাপ সৃষ্টি হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
লঞ্চের কর্মচারীরা বলেন, বেশিরভাগ লঞ্চে সমুদ্রগামী জাহাজের পুরনো জেনারেটর ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। তাপে ইঞ্জিন রুম উত্তপ্ত হয়ে যায়। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনের বিষয়টি আগে থেকে খেয়াল না করলে তাপ থেকে আগুন লেগে গেলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইঞ্জিন রুমে থাকা দাহ্যপদার্থ আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে দেয়।
অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ বলেন, আগের ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকায় গত অক্টোবরে ইঞ্জিন বদলানো হয়। তবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ বলেন, কাঠামোগত পরিবর্তন বা ইঞ্জিন পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তনের আগে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি।
লঞ্চের সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন বলেছেন, রাত আড়াইটার দিকে তিনি নিচতলার টয়লেটে থাকা অবস্থায় বাতি বন্ধ হয়েছে যায়। এর পর বের হয়ে দেখেন ইঞ্জিন রুমে আগুন। চালক কামাল ও গ্রিজারম্যান সুমন দৌড়াদৌড়ি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুঁজলেও অন্ধকারে কিছুই পাচ্ছিল না। তাদের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খোঁজার সময়ই দ্বিতীয় তলায় আগুন দেখতে পান। ইঞ্জিন রুমের আগুন দ্বিতীয় তলায় যাওয়ায় অবাক হয়ে যান। এর পর দৌড়ে ইঞ্জিন রুম থেকে বেরিয়ে যান। তিনি বলেন, লঞ্চের মাস্টার তীরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তীরে ধাক্কা খেয়ে আবার মাঝ নদীর দিকে ভেসে যায়। লঞ্চটি ধাক্কা খেয়ে ভেসে যাওয়ার সময় অনেকের সঙ্গে তিনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেন। আধা ঘণ্টা পর স্থানীয়রা দুটি ট্রলার নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা কিছু মানুষকে উদ্ধার করে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসেইন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় প্রধান মো. কামাল হোসেন বলেন, ইঞ্জিন কক্ষের কাছে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় ছিল। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো চিহ্ন সেখানে পাওয়া যায়নি। সুতরাং গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকা- ঘটেনি।
অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, লঞ্চটিতে দুই মাস আগে রঙসহ কেবিনের ও ইঞ্জিনের কাজ হয়েছে। কেবিনের কাজ করতে গিয়ে কাঠ আর আঠালো পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, যা আগুনকে আরও তীব্র করে।
এদিকে অগ্নিকা-ের পর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না নৌযানটির মাস্টার, সারেং, সুকানিসহ অনেক কর্মচারীর। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়েছে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আমাদের সময়কে বলেন, ‘লঞ্চটির মালিক গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে নাশকতায় আগুন লেগেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ ছাড়া ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।’
ঘটনা রহস্যজনক উল্লেখ করে ওই লঞ্চের এক কর্মচারী বলেন, গভীর রাতে যখন আগুন ধরে তখন বাইরের আবহাওয়ার তাপমাত্র ছিল ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি। এমন ঠা-ার সময় ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগলে কীভাবে তা দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। লঞ্চটি সামনের দিকে বাতাস ভেদ করে চলছিল। ওই অবস্থায় কীভাবে সামনের কেবিন ও মাস্টার রুমে আগুন চলে এলো। বিষয়টি রহস্যজনক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, অগ্নিকা-ে আহত ৮১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অন্যদিকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে নিখোঁজ ৫১ জনের তালিকা দিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে স্বজনরা সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী শহরের পৌর মিনিপার্কের কাছে গত শুক্রবার রাতভর অবস্থান করেন। প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আশায় তারা পাশের টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছিলেন সারারাত। গতকাল শনিবার সকাল হতেই ৫৪ জন নিখোঁজ যাত্রীর খোঁজে শতাধিক স্বজন ভিড় করেন নদীর পাড়ে। পরে তারা জেলা প্রশাসনের কাছে ৫১ নিখোঁজ শিশু, নারী ও পুরুষ যাত্রীর তালিকা দেন। এসব স্বজন বরগুনা, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। নিখোঁজদের দুর্ঘটনার স্থানসহ সুগন্ধা নদীর পাড়ের সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছেন তারা।
এর আগে শুক্রবার রাতে বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ৩৬ জনের লাশ বুঝে নিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে পাঁচজনের লাশ শনাক্ত করতে পারেন স্বজনরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ মানুষের স্বজনদের থাকার জন্য সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী শহরের পৌর মিনিপার্কসংলগ্ন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল সকালে ঝালকাঠি পৌর মিনিপার্কে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক মানুষ নদীর পাড়ে তাকিয়ে আছেন নতুন কোনো লাশ ভেসে ওঠে কিনা, তা দেখতে। অনেকে আবার নিজেদের উদ্যোগে ট্রলার ভাড়া করে সুগন্ধা নদীতে স্বজনদের খোঁজে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি দল ঝালকাঠির লঞ্চঘাটে পৌঁছায় গতকাল সকালে। তারা সারাদিন সুগন্ধা নদীর সম্ভাব্য সব স্থানে লাশের সন্ধানে অভিযান চালায়।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, সুগন্ধা নদীতে স্রোতের মাত্রা বেশি থাকায় ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দুর্ঘটনাস্থলের কাছে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তার পরও ডুবুরি দল সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের একদিন পর পোড়া লঞ্চে এখনো নিখোঁজদের স্বজনের আহাজারী। জীবিত নয়, মৃত স্বজনের মরদেহ খুঁজতে এসেছেন কেউ কেউ। এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিসহ সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান পোড়া লঞ্চ পরিদর্শন করেছেন।
দুর্ঘটনাকবলিত স্থান ঝালকাঠির দিয়াকুল গ্রাম থেকে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে রাখা হয়েছে। শনিবার সকালে লঞ্চটি পরিদর্শনে আসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং বরিশাল বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক কামাল উদ্দিন। তারা লঞ্চের ইঞ্জিল রুমসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে কারণ অনুসন্ধান করেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ নৌমন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিন রুমের ত্রুটি থেকে এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে এখনো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।
স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ৫৪ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে ঝালকাঠি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।
শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয় আরও ৮০ জন। দগ্ধদের মধ্যে ৭০ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অপমৃত্যুর মামলা : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার সকালে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন এ মামলা দায়ের করেন। ঢাকা থেকে বরগুনার বেতাগী রওনা হওয়া লঞ্চটিতে শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় আগুন লাগে।
বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে দগ্ধরা : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দগ্ধরা। স্বজনরা করছেন প্রিয়জনদের সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষায়। চিকিৎসাধীন দগ্ধদের কথায় সেদিনের ভয়াবহতার বিষয়টি উঠে আসে। ঝালকাঠির লঞ্চে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বঙ্কিম মজুমদার বলেন, রাত তিনটার দিকে লঞ্চে আগুন লাগে। আগুনে সারাশরীরের চামড়া পুড়ে গেছে। পোড়া শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করা কঠিন। একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দগ্ধ কিশোরী লামিয়ার ফুফু হাসি বেগম বলেন, লামিয়ার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওর দুই হাত, পা, গলা, মুখ পুড়ে গেছে। ব্যথায় কাতরাচ্ছে। তিনি আরও জানান, একই লঞ্চের আগুনে লামিয়ার দাদি, বাবা, মা ও ভাইও পুড়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লামিয়ার মা-বোনকে। ভাই বরিশাল হাসপাতালে।
দগ্ধ বশিরের তালই আবদুল মালেক খান জানান, যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অবস্থা ভালো নয়। বশিরের মেয়ে তাইয়্যেবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শ্বশুর আগুন দেখে ওদের আগেই নদীতে লাফ দিয়েছিল। বশির ঢাকায় এসেছিল ক্যানসার আক্রান্ত শ্বশুরের চিকিৎসা করাতে।
Leave a Reply