কয়েক দফা প্রচেষ্টার পর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ছয় বাংলাদেশিকে রিয়াদ হয়ে দেশে ফেরানো গেছে। তবে রিয়াদে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থানরত অন্য ছয় বাংলাদেশিকে স্পেনে নেওয়া হয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ঢাকা। স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬০ আফগান শিক্ষার্থীও বর্তমানে স্পেনে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আছেন বলে জানা গেছে। এদিকে আফগানিস্তানে তালেবানের যে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে ঢাকা।
এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গত ২৮ আগস্ট ১২ বাংলাদেশি কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। এরপর সামরিক বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে তাদেরও কাতারের রাজধানী দোহায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৬ বাংলাদেশিকে নেওয়া হয় রিয়াদ। এরপর রিয়াদ থেকে কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে ৬ বাংলাদেশি গত মঙ্গলবার রাতে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরা এই ৬ জন হলেন- রাজিব বিন ইসলাম, মো. কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, আবু জাফর মো. মাসুদ করিম ও শেখ ফরিদ উদ্দিন। তারা সবাই কাবুলে টেলি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান আফগান ওয়্যারলেসের কর্মী ছিলেন।
কাবুল থেকে রিয়াদ হয়ে স্পেনে যাওয়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার। অর্থাৎ আমরা ফ্যাসিলিটেড করছি। সামনেও করব। ইতোমধ্যে যারা আফগানিস্তান ছেড়ে এসেছেন- তাদের তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেখানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট আছে বা অন্য উপায় আছে, সেটির ব্যবস্থা করছি। তারা চলে আসবেন। এ ছাড়া এখনো যারা আফগানিস্তান আছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। যেহেতু তারা ঝুঁকির মধ্যে নেই, সুতরাং তাদের আমরা বলেছি বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উজবেকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমেরিকানরা চলে গেছে। একটি দেশ বেশিদিন বিচ্ছিন্ন থাকবে না। আশা করছি, অচিরেই একটা ব্যবস্থা চালু হবে। তখন যদি ফিরে আসতে চায়, অবশ্যই তারা ফিরে আসতে পারবে।’
চট্টগ্রামের আফগান শিক্ষার্থীর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যারা পড়াশোনা করছিল এবং নতুন স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী তারা এখন তৃতীয় দেশে আছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসবে নাকি তৃতীয় দেশে যাবে, সেটি তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছে। আমাদের দেশে এলে তো তাদের পড়াশোনা শেষ করে চলে যেতে হবে। তারা যদি এমন সুযোগ পায় যে, পড়াশোনাও শেষ করতে পারবে; আবার থেকেও যেতে পারবে- তা হলে অবশ্যই সেটি বেছে নেবে। আমাদের দিক থেকে আমরা ক্লিয়ার যে, যারা এখানে পড়ত তাদের আমরা অনুমতি দিয়েছি যেন তারা এলে পড়াশোনা শেষ করতে পারে।’
তালেবান ও আফগানিস্তানের নতুন সরকার ইস্যুতে ঢাকার অবস্থান জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আফগানিস্তানের এখনকার অবস্থা আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা মনে করি, আফগানিস্তানে বর্তমানে যারা আছেন তারা সরকার গঠন করবেন। একটি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাবেন। তারা শান্তির পক্ষে, স্থিতিশীলতার পক্ষে কথা বলছেন। আমরা আশা করছি তারা এই অবস্থান ধরে রাখবেন। বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার। আমাদের কিছু অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আমাদের কিছু এনজিও সেখানে কাজ করেছে। সুতরাং সামনের দিনগুলোয় যদি উপযুক্ত পরিবেশ এবং পরিস্থিতি থাকে তা হলে সার্কের সদস্য হিসেবে আফগানিস্তানের জনগণ বা যে নতুন সরকার আসবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উন্নয়নমূলক যে কাজগুলোয় বাংলাদেশ সফল হয়েছে, সেগুলো যদি আফগানিস্তান বা তাদের জনগণের উপকারে আসে, আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি। বাংলাদেশ সার্কের ও বিমসটেকের সব দেশের সঙ্গে কোভিডের মধ্যে সহযোগিতা করে গেছে। নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। সেটি আমরা দেখব। আর নতুন সরকার কিভাবে গঠন ও পরিচালনা হয় সেটি আমরা দেখব।’
Leave a Reply