রামিসা তাবাসসুম আলিনা। উনিশ-কুড়ির ওই তরুণী নিজেকে পরিচয় দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে। বাবা পিএইচডি ডিগ্রিধারী, মামা বিশিষ্ট শিল্পপতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের পর বন্ধু তানভীর কামাল তন্ময়ের কাছে নিজের সম্পর্কে এমন তথ্যই দেন আলিনা। দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক সময় রূপ নেয় প্রেমে। প্রেম থেকে বিয়ে। এর কিছুদিন পরই তানভীর জানতে পারেন, আলিনা তাকে সবই মিথ্যা বলেছেন। তার জীবনযাপনও অস্বাভাবিক। ব্যাংক হিসাবেও ছিল অস্বাভিবক লেনদেন। এমনকি তানভীরকেও একপর্যায়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন তিনি।
এর মধ্যে গত ১০ আগস্ট ফেসবুক লাইভে এসে আলিনা নিজেকে রাজধানীর ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী দাবি করেন। অভিযোগ করেন, যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাকে নির্যাতন করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে স্ত্রীর হাত থেকে বাঁচতে গত ১১ আগস্ট আদাবর থানায় মামলা দায়ের করেন তানভীর।
তানভীর কামাল তন্ময় জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আলিনার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সম্পর্কের সূত্র ধরে আলিনাকে বিয়ে করবেন বলে নিজের পরিবারকে জানান তানভীর। পরিবারের সদস্যরা তখন মেয়ের বায়োডাটা (জীবনবৃত্তান্ত) এনে দিতে বলেন। আলিনার সেই বায়োডাটায় লিখা ছিল- তার বাবা একজন পিএইচডিধারী, মামা শিল্পপতি। এ ছাড়াও আলিনা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে উল্লেখ করেন। তবে কোনো এক কারণে তানভীরের পরিবার সেই বিয়েতে রাজি হয়নি। পরে ছেলের জোরাজোরির কারণে বিয়েতে সম্মতি দিলেও শর্ত দেওয়া হয়- বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকতে হবে।
পরিবারের কথামতো বিয়ের আগে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বাসা নেন তানভীর। আলিনাকে নিয়ে ওই বাসায় ওঠেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরই জানতে পারেন, মা-বাবার যে পরিচয় আলিনা তাকে দিয়েছিলেন তা সত্য নয়। বাবার পরিচয় ঠিক থাকলেও মায়ের পরিচয় লুকিয়েছেন। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আলিনা জানান, তার মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক দিন আগেই। তার মা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আর তিনি বড় হয়েছেন তার নানার বাড়িতে।
এদিকে তানভীর তার স্ত্রীর বিভিন্ন ফাইল ঘেঁটে একটি জিডির কপি পান। আর সেটি আলিনার বিরুদ্ধে করেছিলেন তার নিজের মা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো ব্যক্তিগত কাগজপত্রে হাত দেওয়ার কারণে তানভীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেন আলিনা। শুধু তাই নয়, কয়েক মাস চলে যাওয়ার পর তানভীর লক্ষ্য করেন, আলিনা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন না। পরে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আসলে তার স্ত্রী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী নন। সেই থেকে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
সর্বশেষ আলিনার বিষয়ে বড় একটি তথ্য নাড়িয়ে দেয় তানভীরকে। ব্যক্তিগত ফাইল ঘেঁটে দেখেন তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪৬ লাখ টাকার একটি লেনদেন হয়েছে। এত বিশাল অংকের টাকা কোথা থেকে এসেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তরই দিতে পারেননি আলিনা। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুন দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়, দুজন আহতও হন। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ওইদিনের পর থেকেই আলিনা ও তানভীর আলাদা থাকেন।
তানভীর কামাল তন্ময় আমাদের সময়কে বলেন, ‘গত ১৭ জুন রাতের ঘটনার পর আলিনার সঙ্গে বিষয়টি পারিবারিকভাবে মিটমাটের চেষ্টা করি। তখন সে আমার কাছে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ৫৪ লাখ টাকা দাবি করে। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া সে এখন আমার পরিবারকে জড়িয়ে নানা ধরনের মিথ্যাচার করছে। অথচ এ বিয়ের সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, আলিনা একটি চক্রের সদস্য। সে ওই চক্রের মাধ্যমে আমাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে আলিনার বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তার পরিবারও মেয়েকে নিয়ে বিরক্ত। তারা জানান, একটা পর্যায়ে আলিনা উচ্ছৃঙ্খল ও অস্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলে পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
মামলার বিষয়ে আদাবর থানার শহিদুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply