অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণেই শুধু নয়, বংশগত কারণেও শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটিকে বলে ফ্যামিলিয়াল বা পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া। মা কিংবা বাবা থেকে এ জিন পেলে সেটিকে বলে হেটারোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া এবং মা-বাবা উভয়ের কাছ থেকে এ জিন পেলে সেটিকে হোমোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে। তাদের অনেকেরই ছোটবেলায় হৃদরোগ ও পরে হার্ট অ্যাটাক হয়।
রোগের তীব্রতা : এসব ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। তা এলডিএল রিসেপ্টর জিনের এক ধরনের পরিবর্তন ঘটিয়ে রোগের সৃষ্টি করে। অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগটির হেটারোজাইগাস ফর্মগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বা সম্ভাব্যতা প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে একজন। তবে হোমোজাইগাস গোত্রগুলোর সম্ভাব্যতা অনেক কম। দশ লাখে একজন। রোগের জিন বহনকারী নিকটতম আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক হলে হোমোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া দেখা দেয়। অসুখটি সাধারণত একটি এলডিএল রিসেপ্টর জিন প্রত্যেক পিতা-মাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের কোলেস্টেরলের আধিক্যের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ খাবার বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এ জন্য জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধের প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। শরীরে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের স্বাভাবিক মাত্রা টোটাল কোলেস্টেরল বলতে সাধারণত এইচডিএল, এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের ০.২ গুণের সমষ্টিকে বোঝায় অর্থাৎ টোটাল কোলেস্টেরল = এইচডিএল+এলডিএল+০.২ ট্রাইগ্লিসারাইড। টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ৬.২ মিলিমোল/লিটারের নিচে হওয়া ভালো। তবে ২৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ৬.২ মিলিমোল/লিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ১.৬ মিলিমোল/লিটারের চেয়ে বেশি হওয়া আবশ্যক। আর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ২.৬ মিলিমোল/লিটারের চেয়ে কম হতে হবে। আদর্শ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা ১.৭ মিলিমোল/লিটারের নিচে হওয়া প্রয়োজন।
রোগের লক্ষণ : ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়ার শিকার রোগীদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, ওপরোক্ত পরিমিতি প্রায়ই মেনে চলে না। স্ট্যাটিনজাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সত্ত্বেও পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়ার রোগীর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথার (এনজাইনা) পাশাপাশি ত্বকে জেনথোমা বা হলুদ রঙের নরম চর্বির পাহাড় দেখা যায়। এমনকি টিনএজারদেরও একাধিক করোনারি বা হার্টের ধমনি ব্লকের কারণে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়। আমাদের দেশেই ১৩-১৪ বছর বয়সী একাধিক রোগী রয়েছেÑ যাদের বাইপাস সার্জারি জরুরি ভিত্তিতে করানো হয়েছে।
রোগ প্রতিরোধে করণীয় : ফলমূল, শাকসবজি, মাছ ও কম চর্বিযুক্ত অথবা চর্বিমুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু হৃদরোগ বিভাগ,
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শেরেবাংলানগর, ঢাকা
Leave a Reply