‘আমাদের লিখনযন্ত্রগুলো আমাদের চিন্তনকেও প্রভাবিত করে।’ নিচা১ এ বাক্য লিখেছিলেন, বা আরও স্পষ্ট করে বললে, টাইপ করেছিলেন মলিং-হানসেন লিখনবল ব্যবহার করে। এ এক অদ্ভুত বিস্ময়কর যন্ত্র বটে : দেখতে কুশ বলের মতো, পিতল দিয়ে গড়া, গায়ে টাইপরাইটারের বোতামগুলো গাঁথা থাকত। কোনো একটি বোতাম চাপ দিলে নিম্নমুখী একটি লিভার সংশ্লিষ্ট টাইপফেসকে ভেতরে আটকে রাখা কাগজের ওপর ঠেসে ধরত।
সর্বজনবিদিত এই যে, নিচার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল ছিল, সেজন্য তিনি ওই লিখনবল (রাইটিং বল) ব্যবহার করতেন। সে সময় কথায় কথায় যেসব নীতিকথা আওড়ানো হতো, তিনি স্পর্শশক্তির সাহায্যে ওই লিখনবল ব্যবহার করে সংক্ষেপে সেসব নীতিবচন টাইপ করতেন। তিনি বলতেন, লিখযন্ত্রগুলো আমাদের চিন্তাকে প্রকাশের কৌশল বা সুবিধা নয় কেবল; বরং আমাদের যা কিছু বলার আছে, তার পরিসরকে এরা সীমিত কিংবা প্রসারিত করে দেয়। দোয়াত কলম আর চকপেন্সিল হাতে নিলে আলাদা আলাদা অনুভ‚তি দেয় এবং দুটো লিখনযন্ত্র দিয়ে আমরা কেবল আলাদাভাবেই লিখি না, বরং আমরা ভিন্ন ধরনের জিনিস লিখি (এবং ভাবি)।
লিখন সরঞ্জাম ও লিখনযন্ত্রগুলো লেখালেখির অতীত সম্পর্কে সত্যিকার অর্থে আমাদের কতটুকু বলতে পারে? এ জাতীয় প্রশ্ন আমার মনে অনেক বেশি ঘুরপাক খেত। শব্দ প্রক্রিয়াকরণের (ওয়ার্ড প্রসেসিং) লিখনেতিহাস সম্পর্কে আমার লেখা ট্র্যাক চেঞ্জেস বইটি প্রকাশিত হয়েছে। যাদের সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছি, প্রত্যেকেই জানতে চেয়েছেন, কম্পিউটার ঠিক কীভাবে সাহিত্যের ধারা পরিবর্তন করেছে। ধারা বলতে কেউ কেউ স্বতন্ত্র লেখকের রচনাশৈলীকে বুঝিয়েছেন, কেউ কেউ আবার পুরো সাহিত্যসমাজকেই বুঝিয়েছেন।
একদিকে রচনাশৈলী হলো বাস্তবধর্মী বা দৃশ্যগম্য- পৃথক শব্দ ও বাক্যাংশ দিয়ে নির্মিত, শৈলীমিতির (স্টাইলোমেট্রি) বিদ্যায়তনিক শাখায় এ নিয়ে গবেষণা চলে। অন্যদিকে রচনাশৈলী অলীকও বটে- লেখকের ‘কণ্ঠস্বর’ কিংবা গদ্যের অনন্য ‘অনুভূতি’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সন্দেহাতীতভাবে, এ কারণেই লিখনশৈলী আমাদের মুগ্ধ করে। এ কারণেই কৌতূহল নিয়ে আমরা বুঝতে চাই, লিখনশৈলীতে কম্পিউটারের কী প্রভাব। এর পরও আমি মনে করি, আমরা প্রশ্নটা ভুলভাবে তুলেছি।
খেলা বদলেছে শব্দ প্রক্রিয়াকরণ
কম্পিউটার কীভাবে সাহিত্য রচনার গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি : সংশোধনী স্পষ্টত সহজতর হয়ে উঠেছে, এমনকি এখন সংশোধনী (রিভিশন) ও রচনার (কম্পোজিশন) মধ্যকার ফারাক পুরোপুরি ঘুচে যাচ্ছে। (এখন এমনও লাগসই লিখনযন্ত্র২ রয়েছে যে, আপনি শুধু খসড়া লিখে যাবেন, এমনকি সংশোধনীর কথা ভুলেও ভাবার দরকার পড়বে না।)
আমরা জানি, শব্দ প্রক্রিয়াকরণ কিন্তু উপন্যাসের পটভ‚মিতেও জায়গা করে নিয়েছে। যেমন, উইলিয়াম বুরোর ‘ন্যাকেড লাঞ্চ’ বা স্টিফেন কিংয়ের ‘মিজারি’র মতো উপন্যাসে আমরা টাইপরাইটার দেখতে পাই।
এবং আমরা জানি, সাহিত্যে উৎপাদন পরিস্থিতি বদলে গেছে : ১৯৮৩ সালে, আমার বইয়ে যেমনটা বর্ণনা করেছি, [মার্কিন ঔপন্যাসিক ও কবি] জন আপডিক ক্রোধান্বিত হয়ে তার সচিবকে বরখাস্ত করার নির্দেশনামা লিখে পাঠাতে টাইপরাইটার ব্যবহার করেছিলেন, কারণ তার কাছে কেবলই একটা ওয়ার্ড প্রসেসর ছিল। পরের বছর, [ইহুদি গণহত্যার উত্তরজীবী, ইতালীয় লেখক] প্রিমো লেভি তার এক ইংরেজ বন্ধুকে লিখেছিলেন, তিনি নিজে ‘ম্যাক নিয়ে বিরক্তপ্রায়।’ ফিরতি লেখায় ওই বন্ধু তাকে বলেছিলেন, তার অ্যাপেল ‘বুদ্ধিমান নতুন টাইপরাইটার’। লেভি এবার লিখলেন, ‘এর চেয়েও বেশি কিছু : একদিকে কৃত্রিম স্মৃতি, একটা সংরক্ষণশালা, অন্যদিকে এ যেন এক নির্বিবাদী সহচরী, আবার প্রতিদিন নতুন খেলা, সেই সঙ্গে নকশাকারও।’
কিন্তু এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা শৈলী বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ পাইনি কিন্তু।
শৈলী অনেক বৈশিষ্ট্যের সমাহার। অবশ্যই লিখতে যে উপকরণ ব্যবহার করেন লেখক, পাশাপাশি বাজার প্রবণতা ও সম্পাদকীয় নির্দেশনা, ওই সময় লেখক কী পড়ছেন, লেখকের আবেগী অবস্থা এবং এরকম আরও অনেক কিছু। (অথচ, এমনকি নিচা নিজে তার মূল জার্মান ভাষায় গেদাঙ্কে (বাংলায়, চিন্তা) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, শৈলী বা এরকম কোনো শব্দ নিয়ে কিছু বলেননি।)
হালের দুই গবেষক অবশ্য এটা নির্ধারণের চেষ্টা করেছিলেন যে, চারুকলায় স্নাতকোত্তর পাঠ নেওয়ার ভিত্তিতে লেখকদের সাহিত্যশৈলী পরিমাপ করা যায় কিনা। অনেকে ভাবতে পারে, এই মাপকাঠিতে ভালো-মন্দের তফাত করা যথেষ্টই সহজ কাজ। কিন্তু ওই গবেষণায়৩ তা প্রতীয়মান হয়নি।
রচনাশৈলী নাকি পাঠচেতনা
টাইপরাইটারে লেখার সময় আমরা সর্বদাই বর্তমানে থাকি, কারণ এখানে লেখা এগোয় অক্ষরের পর অক্ষর, লাইনের পর লাইনের বাহনে চড়ে। বিপরীতে, ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের সুবাদে লেখকরা পাণ্ডুলিপিকে সামগ্রিকভাবে সমধাঁচে ধারণ করতে সক্ষম হন। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় পুরো পাণ্ডুলিপিতে তাৎক্ষণিক তালাশ করা যায়। পুরো অনুচ্ছেদ ইচ্ছেমতো আগ-পিছ করা যায়। প্রয়োজন পড়লে অধ্যায় বা বিভাগগুলো পুনরায় সাজানোও সম্ভব। পুরো পাঠক্ষেত্র প্রবাহযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে; কম্পিউটারের ক্রমশ বর্ধমান স্মৃতি দ্বারা পাঠক্ষেত্রকে দরকার হলে যত ইচ্ছা বড় কিংবা যত খুশি ছোট করা যায়।
ওয়ার্ড প্রসেসরের এমন সুবিধার সুবাদে লেখার পরিসরের ওপর এক ধরনের নতুন নিয়ন্ত্রণ রচিত হলো। এ প্রযুক্তির প্রারম্ভিক গ্রহীতাদের মধ্যে অন্যতম লেখক স্ট্যানলি এলকিন এবং অ্যান রাইস। ভ্যাম্পায়ার রানি অ্যান রাইসের ভাষ্য, ‘একবার কম্পিউটারে সত্যিই অভ্যস্ত হয়ে গেলে এবং কিবোর্ড থেকে লেখায় তথ্য যোগ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, তখন মনের মধ্যে কিছু একটা ঘটে যায়। মানে, লেখক হিসেবে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আপনি হয়তো তখন এমনও কাজ করতে সক্ষম হবেন, যা আগে কখনো আপনি ভাবেননি।’
১৯৭৯ সালে প্রথম ওয়ার্ড প্রসেসর নিয়েছিলেন ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী লেখক স্ট্যানলি এলকিন। নতুন এ প্রযুক্তির সঙ্গে গল্পের পটভ‚মির সম্পর্ক বলতে গিয়ে ওই সময় তিনি ওয়ার্ড প্রসেসরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে বলেছিলেন, ‘গল্পের পট তো আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। লেখায় আগে কোন প্রসঙ্গ (রেফারেন্স) ব্যবহার করা হয়েছে, যন্ত্র তা নিমিষেই খুঁজে দিতে পারে। সুতরাং গোটা গল্পটা রচনার কাজে এই প্রাযুক্তিক কৌশলকে সহায়ক সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’৪
নিজ নিজ ভাষায় এলকিন এবং রাইস যা বলছেন, ক্রিশ্চিনা হাসের মতো তাত্তি¡করা একে ‘পাঠচেতনা’ (সেন্স অব দ্য টেক্সট৫) বলে অভিহিত করেছেন। পাঠচেতনা হলো পাতায় (বা স্ক্রিনে) শব্দদের মানসিক কাঠামো এবং এর সঙ্গে লেখকের অনুভ‚ত সম্পর্ক।
অগুনতি লেখকের ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, শব্দ প্রক্রিয়াকরণ কত গভীরভাবে তাদের পাঠচেতনা পাল্টে দিয়েছে। বদলে গেছে লেখা নিয়ে তাদের ভাবনা; তাদের বিবেচনায় যা ছিল অসম্ভব, তাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু লেখার ‘রচনাশৈলী’ (স্টাইল) কি বদলেছে? রচনাশৈলী বলতে সাধারণত শব্দ-নির্বাচন এবং বাক্যগঠন বা বাক্যবিন্যাসকে বোঝানো হয়।
কম্পিউটারে আধেয় প্রক্রিয়াকরণ
[লিখনযন্ত্রের সঙ্গে রচনাশৈলীর সম্পর্ক নিয়ে] এ ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, তা কিন্তু বলছি না। সত্যি বলতে, পণ্ডিতরা এমন বিশ্লেষণ কয়েক দশক ধরেই করে আসছেন। আপনি নিজেও তা শুরু করতে পারেন। গবেষণার জন্য বেছে নিতে পারেন আইজাক অসিমভের মতো লেখককে, যিনি এক জীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য লেখা। আমরা জানি, আসিমভ ঠিক কোনদিন প্রথম কম্পিউটার পেয়েছিলেন : ১৯৮১ সালের ৬ মে। কম্পিউটারটি ছিল টিআরএস-৮০ মডেল-২। এখন আপনার যা দরকার তা হলো, ওই দিনের আগে ও পরে আসিমভ যত বই লিখেছেন তার একটা ডিজিটাল সংগ্রহ। এরপর অ্যালগরিদমের সাহায্যে কী খুঁজে পান, সেটাই দেখার বিষয়।
এখন প্রশ্ন হলো, অ্যালগরিদম থেকে কী বোঝা যাবে? হয়তো আসিমভের সাহিত্যসম্ভার সম্পর্কে এমন কিছুর হদিস দেবে যা আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি। আবার সাহিত্যশৈলী বিশারদ লুই মিলিক জোনাথন সুইফট সম্পর্কে যা জেনেছিলেন, অ্যালগরিদম থেকে তেমন কিছুর সন্ধানও পাওয়া যাতে পারে। মিলিকের অনুসন্ধান হলো, ‘কম সংখ্যায় প্রাথমিক নির্ধারক (ইনিশিয়াল ডিটারমিনার) ও ঘন ঘন প্রাথমিক সংযোজক (ইনিশিয়াল কানেক্টিভ)- এই শৈলীই [সুইফটকে] লেখক হিসেবে স্বতন্ত্রতা দিয়েছে, যিনি ট্রানজিশন পছন্দ করতেন এবং বেশি বেশি সংযোজক ব্যবহার করতেন।’
কয়েক বছর আগে দুজন গবেষক নিচার সাহিত্যকর্ম নিয়ে এমন গবেষণায় বসেছিলেন। নিচার পূর্ববর্তী এবং অন্ধত্বের সূচনাকাল ও লিখনবল ব্যবহার শুরুর পরবর্তীকালে তার রচনাশৈলীর মধ্যকার তফাত স্পষ্টরূপে নিরূপণ করতে তারা সক্ষম হয়েছিলেন। শব্দের ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে তারা গবেষণার ফল উপস্থাপন করেছিলেন। দার্শনিক নিচার লেখাগুলো কখন লেখা হয়েছিল, এর সঙ্গে তার লেখায় ধাঁচের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ওই গবেষণায়৬।
এর পরও শব্দের ঘনত্বই তো সবকিছু নয়। যেমন, শব্দের ঘনত্বের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বাক্যের দৈর্ঘ্যরে। অথচ নিচা কিন্তু বাক্যের পরিসর নিয়েই প্রথমে মন্তব্য করেছিলেন। মলিং-হানসেন লিখনবল যেভাবে আধেয় সংক্ষেপণে (অনেকটা টুইটারের মতো) প্রভাব রেখেছিল, নিচা সেই কথাই বলতে চেয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত শব্দভাণ্ডারের বিবর্তন নিয়ে মন্তব্য করেননি। এবং আমরা এ-ও জানি, প্রতিক‚লতা কাটাতে নিচা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ওই লিখনবল এদের একটি। উদাহরণস্বরূপ, নিচা তার সহকারীদের সামনে জোরে জোরে গল্প বলতেন, আর সেসব কথা শ্রুতিলিখনের নির্দেশ দিতেন।
অ্যান ফাদিমান একবার দাবি করেছিলেন যে, তিনি অন্য লেখকদের সাহিত্যে শব্দ প্রক্রিয়াকরণের ‘পদচিহ্ন’ শনাক্ত করতে পারেন। এক কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্য কম্পিউটারে ‘গন্ধ শোঁকা’র মাধ্যমে আমরা ভাব ও লিখিত শব্দের মধ্যকার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ ফারাকও ধরতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, সাহিত্যের শৈলীতে প্রযুক্তির প্রভাব পরিমাপের সর্বোত্তম উপায় হতে পারে : সমৃদ্ধ তথ্যশালা পদ্ধতিতে (বিগ ডেটা অ্যাপ্রোচ) কয়েকশ লেখকের সাহিত্যকর্মকে একত্রিত করা। আধুনিক ওয়ার্ড প্রসেসরগুলোয় ব্যাকরণবিধি যাচাইয়ের যে নির্দেশনা জুড়ে দেওয়া আছে, তা কি সাহিত্যরচনা উল্লেখযোগ্য বা পরিমাপযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলছে কি না, তা জানতে পারলে মন্দ হয় না।
এতকিছুর পরও কিবোর্ডজুড়ে থাকবে অযুত-নিযুত হাত। লিখনযন্ত্রগুলো খটমটে; কিন্তু এর চেয়েও অধিক জটিল স্বয়ং লেখালেখি, সব সময়ই।
ম্যাথিউ কারশনবম : ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ইংরেজি ও ডিজিটাল স্টাডিজের অধ্যাপক।
টিকা
১ ফ্রিডরিখ উইলহেল্ম নিচা (১৮৪৪-১৯০০) ছিলেন জার্মান কবি ও দার্শনিক এবং সাহিত্য সমালোচক ও ভাষাবিজ্ঞানী। ৪৪ বছর বয়সে তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরের বছরই তিনি মারা যান। ‘ঈশ্বর মৃত’- এই দর্শনের জন্য তিনি প্রখ্যাত। তার মতে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার অপনয়ন ঘটেছে মানুষের প্রতিবোধনে (এনলাইটমেন্ট)। তার দাদা প্রতিমতবাদের (প্রোটেস্ট্যান্টিজম) পক্ষে বই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি নিজে জাতীয়তাবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, গ্রিক বিয়োগগাথার (ট্র্যাজেডি) উদ্ভব হয়েছিল অ্যাপোলোনিয়ান উপাদান (যেমন- পরিমিতি, সংযম ও সম্প্রীতি) ও ডায়োনিশিয়ান উপাদানের (যেমন- অবারিত আবেগ) মিশ্রণে; এই বিয়োগগাথার জমানা ফুরিয়ে আসে সক্রেটিক যুক্তিবাদ ও আশাবাদে; পরে সে বিয়োগগাথাকে পুনর্জীবিত করে উইলহেলম রিচার্ড ভাগনারের সঙ্গীত। এ প্রসঙ্গ বিধৃত আছে ১৮৭২ সালে প্রকাশিত তার প্রথম বইয়ে, যার নাম ‘সঙ্গীতের আত্মা থেকে জন্ম শোকের’ (দ্য বার্থ অব ট্র্যাজেডি ফ্রম দ্য স্পিরিট অব মিউজিক)।
টিকাসূত্র : https://www.britannica.com/biography/Friedrich-Nietzsche (সর্বশেষ প্রবেশ ৮ জুলাই ২০২১)
২ লেখক এখানে ফ্রিরাইট-এর কথা বলেছেন, যে ‘স্মার্ট টাইপরাইটার লেখককে তার কম্পিউটার থেকে মুক্ত করতে চায়’।
টিকাসূত্র : https://www.theatlantic.com/technology/archive/2016/05/freewrite/481566 (সর্বশেষ প্রবেশ ৮ জুলাই ২০২১)
৩ ২০১৬ সালে গবেষণাটি পরিচালনা করেন রিচার্ড জ্যঁ সো এবং অ্যান্ড্রু পিপার। ট্র্যান্সপ্যাসিফিক কমিউনিটি: আমেরিকা, চায়না, অ্যান্ড দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব আ কালচারাল নেটওয়ার্ক (২০১৬, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস) গ্রন্থের লেখক সো তখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোয় ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক। অন্যদিকে, বুক ওয়াজ দেয়ার: রিডিং ইন ইলেক্ট্রনিক টাইমস (২০১২, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস) গ্রন্থের লেখক পিপার ওই সময় কানাডার ম্যাকগ্রিল ইউনিভার্সিটির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সহযোগী অধ্যাপক। তাদের সংশ্লিষ্ট গবেষণাটির নির্যাস পাওয়া যাবে সংযুক্ত টিকাসূত্রে।
টিকাসূত্র : https://www.theatlantic.com/entertainment/archive/2016/03/mfa-creative-writing/462483 (সর্বশেষ প্রবেশ ৮ জুলাই ২০২১)
৪ স্ট্যানলি এলকিনের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পিটার বেইলি। প্রকাশ হয়েছিল দ্য রিভিউ অব কনটেম্পোরারি ফিকশন জার্নালে, ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্ম সংখ্যায়। পুরো সাক্ষাৎকারটি পড়া যাবে এই ঠিকানায় : http://www.dalkeyarchive.com/a-conversation-with-stanley-elkin-by-peter-j-bailey (সর্বশেষ প্রবেশ ৮ জুলাই ২০২১)
৫ ক্রিশ্চিনা হাস পাঠচেতনার (সেন্স অব দ্য টেক্সট) ধারণাটি আলোচনা করেছেন ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তার রাইটিং টেকনোলজি: স্টাডিজ অন দ্য ম্যাটেরিয়ালিটি অব লিটারেসি গ্রন্থে।
৬ ডেভিড বেরি ও জান রিবিকি ওই গবেষণার সারসংক্ষেপ নাতিদীর্ঘ এক প্রবন্ধে তুলে ধরেছিলেন এক বøগপোস্টে, ২০১২ সালে। ওই প্রবন্ধে কিটলার নামে এক গবেষকের প্রাসঙ্গিক একটি অনুসন্ধানকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল। কিটলার পর্যবক্ষেণ করেছেন, টাইপরাইটার ব্যবহার করায় নিচার লেখায় ‘যুক্তির বদলে নীতিবচন, ভাবের বদলে শ্লেষ, বাগ্মিতার বদলে টেলিগ্রাম (যথা-সংক্ষেপে বর্ণনা) ধারা’ পরিলক্ষিত হয়।
টিকাসূত্র : http://stunlaw.blogspot.com/2012/12/the-author-signal-nietzsches-typewriter.html (সর্বশেষ প্রবেশ ৮ জুলাই ২০২১)
লেখার উৎস
‘টেকনোলজি চেঞ্জেসে হাও অথরস রাইট, বাট দি ইমপ্যাক্ট ইজন’ট অন দেওয়ার স্টাইল’ শিরোনামে মূল লেখাটি প্রকাশ করে দ্য কনভারসেশনে, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই। পড়া যাবে এই লিংকে :
https://theconversation.com/technology-changes-how-authors-write-but-the-big-impact-isnt-on-their-style-61955 (সর্বশেষ প্রবেশ : ২৬ জুলাই ২০২১)
Leave a Reply