করোনাভাইরাসের হটস্পট এখন ময়মনসিংহ বিভাগ। কিছুদিন কম থাকলেও ইদানিং আবারও আক্রান্ত, মৃত্যু ঝুঁকি ও আতঙ্ক সবই বাড়ছে এই বিভাগে। বিভাগের জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোণা জেলায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সর্বমোট ২০ হাজার ২৩৮ জন শনাক্ত আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৮৪ জন। এ পর্যন্ত করোনা ১ লাখ ৬১ হাজার ১২৪টি নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ হাজার ২৮৯জন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. মো. শাহ আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের চার জেলায় মোট ৭২৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬৯ জন। এদের মধ্যে ময়মনসিংহে ১০৮, নেত্রকোণায় ৮, জামালুরে ৩৭ ও শেরপুরে ১৫ জন। বিভাগে আক্রান্তর হার ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ বলে জানান তিনি।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন করোনায় এবং ৯ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ইউনিটটিতে করোনায় মারা গেছেন ময়মনসিংহ সদরের নাসিরুদ্দিন (৬৫), তারা বালা সাহা (৮০), অপর্না গোমেজ (৪২), নার্গিস আক্তার (৬০), তারাকান্দার শাহিদা আক্তার (৩৮), জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার রোকেয়া (৬০), শেরপুর সদরের গেন্দাফুল (৩৫) ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আকলিমা খাতুন (৪৯)।
এছাড়া এই সময়ের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান- ময়মনসিংহ সদরের আবদুর রশিদ (৬৫), জেসমিন রহমান (৬৩), মুক্তাগাছার মোছা. মরিয়ম (৭০), সোহরাব উদ্দিন (৬৫), ফুলবাড়িয়ার পারভিন আক্তার (৩৫), আছিয়া বেগম (৪০), তারাকান্দার সুর“জ আলী (৪৮), সুনামগঞ্জের দিজেন্দ্র ( ৬৫) এবং গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিল্পী আক্তার (৪০)।
ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৪৩৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ২২ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫৮ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩ জন।
এদিকে ময়মনসিংহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. মো. শাহ আলম আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত জেলাওয়ারী ময়মনসিংহে ১১ হাজার ২৯৭জন, নেত্রকোনায় ২ হাজার ৫৯৫, জামালপুরে ৩ হাজার ৭৬৬ জন, জন এবং শেরপুরে ২ হাজার ৫৮০ জন। এ নিয়ে বিভাগে সর্বমোট মারা গেছেন ২৮৪ জন। ২৮৪ জনের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১১৩ জন, নেত্রকোনা জেলায় ৫২ জন, জামালপুরে ৭৪ জন এবং শেরপুর জেলায় ৪৫ জন রয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ জানান, অকারণে ঘোরাঘুরি ও শপিংসহ সবকিছু খুলে দেওয়ার ফলে অবাধ চলাচলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এছাড়া গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য চলছে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করায় করোনা সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। দ্রুত আক্রান্তের লাগাম ধরে টানতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, করোনা সংকট মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩২৭ টন চাল ও ৬৫ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা। করোনায় তার (মেয়র টিটুর) ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৭০ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছেন।
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জনবহুল ৫২৫টি স্থানে করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও ১০০ টি মাইকে দৈনিক সচেতনতা বার্তা প্রচার, ২০টি স্থানে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা এবং বিতরণ করা হয়েছে কয়েক লাখ মাস্ক। এছাড়া নিয়মিত ৪টি গাড়ি এবং ২৫টি স্প্রে ম্যাশিনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে বলেও জানান মেয়র।
তিনি আরও জানান, কাঁচাবাজারকে সুপ্রশস্ত স্থানে- প্রথমে কাঁচারিঘাটে ও পরবর্তীতে রেলস্টেশনের সামনে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাস্ক, সামাজিক দুরত্ব এবং করোনা প্রতিরোধে সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে মসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়র টিটু জানান, স্থাপন করা হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। ডাক্তারদের যাতায়াত এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা সংগ্রহে করা হয়েছে পরিবহনের ব্যবস্থা। মানুষ যেন ঘরে থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে সেজন্য চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সেন্টার।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান গণপরিবহণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক ডা. এইচ. এ. গোলন্দাজ জানান, সরকার মাস্ক বাধ্যতামূলক করলেও এখনো মাস্ক পড়ছে না। গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য চলছে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করার ফলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। দ্রুত আক্রান্তের লাগাম ধরে টানতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
Leave a Reply