গাইবান্ধায় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার নামে চলছে হযবরল অবস্থা। ফলে জনবল, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে এখানে এসে চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে অনেক রোগী ফিরে যায়। স্থানীয়দের মতে, মেহেরপুরের মতো একটি ছোট্ট জেলায় ২৫০ বেডের হাসপাতাল থাকলেও গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালটির মাত্র ২০০ শয্যা। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সামান্য জটিল কোনো রোগী হাসপাতালে এলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে রেফার করা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এখানে ২০ শয্যার একটি করোনা ইউনিট থাকলেও করোনার কোনো চিকিৎসক নেই; নেই আইসিইউ। দুটি ভেন্টিলেটর মেশিন থাকলেও সেগুলো বিশেষজ্ঞের অভাবে চালু করা হচ্ছে না। এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন চালু থাকলেও হাই ফ্লো কন্ট্রোলিং ব্যবস্থা না থাকায় লিকুইড অক্সিজেন রাখারও সুযোগ নেই। এ জন্য একটি ট্যাঙ্কের দরকার। কিন্তু সে ব্যবস্থা করা হয়নি এখনো। ফলে করোনা রোগীসহ অন্যদের জন্য অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
একজন সিনিয়র চিকিৎসক জানান, ৪২টি চিকিৎসক পদের মধ্যে বর্তমানে এ হাসপাতালে কর্মরত মাত্র ১৮ জন। মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, সার্জারিসহ বিভিন্ন চিকিৎসক পদ শূন্য। এখানে দুটি এক্সরে মেশিন থাকলেও একটি বিকল, অপরটিতে রেডিও লজিস্টের অভাবে কাজ হয় না। তাছাড়া যে এক্সরে মেশিনটি সচল রয়েছে, সেটিও এনালগ সিস্টেমের বলে হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে সব রোগীকে বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্সরে প্লেট করিয়ে আনতে হয়। হাসপাতালে ইসিজি মেশিন না থাকায় গাইবান্ধা পৌরসভা একটি ইসিজি মেশিন প্রদান করেছে।
কিন্তু সেটি চালাবার জন্য স্থায়ী কোনো জনবল না থাকায় বিভিন্ন সময় রোগীদের বাইরের ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে ইসিজি মেশিন নিয়ে এসে পরীক্ষা করাতে হয়। হাসপাতালে একজন জুনিয়র কার্ডিওলজিস্ট কর্মরত রয়েছেন। একটু জটিল রোগী হলেই তিনি রোগীদের দায়ভার না নিয়ে রংপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। অথচ ওই ডাক্তার স্থানীয় একটি হাসপাতালে হৃদরোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা করছেন। প্যাথলজিস্ট পোস্টে কোনো ডাক্তার নিয়োগ না করায় টেকশিয়ানের রিপোর্টের ওপরই এখানে চিকিৎসা চলে। এর ফলে সম্প্রতি টেকনিশিয়ানের দেওয়া ভুল রিপোর্টের ওপর চিকিৎসা করতে গিয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞের হাতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে একটি আল্টাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সনোলজিস্ট না থাকায় সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন এ মেশিনটি চালু রাখা হয় কোনো রকমে। ফলে অসুস্থ ব্যক্তিরা বিশেষ করে নারী রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।
হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আগে পাশের জমিগুলো নিচু থাকায় সেখানে পানি চলে যেত। কিন্তু এখন ওইসব জায়গায় বাড়িঘর ওঠায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাসপাতাল কমপাউন্ডে পানি জমে যায়। ক্লিনারের পদে ১৫ জন থাকলেও কর্মরত মাত্র ৪ জন। ফলে এ হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বালাই নেই। যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা। টয়লেটগুলো নোংরা আবর্জনা এবং পানিতে সয়লাব হয়ে থাকে। রোগীরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। বিভিন্ন পদে ১৮৭ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৬৫ জন। ফলে প্রশাসনিক এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাজসহ নানা কাজে চলছে বিশৃঙ্খলা।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মেহেদী হাসান বলেন, জনবল সংকটসহ নানা অসুবিধার মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। সীমিত সংকট চিকিৎসক রোগীর সেবা দিতে সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, কীট সংকটের কারণে এখন দিনে ৩০ জনের বেশি লোকের করোনা টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।
Leave a Reply