ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, দলের সিনিয়র এক নেতার মন্তব্য ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এক বক্তব্য কেন্দ্র করে দৃশ্যমান হয়েছে বিএনপিতে উত্তাপ।
বিষয়টি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বে কোনো সমস্যা নেই। তবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা থাকবে। দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান মনে করেন, পরিকল্পনামাফিক দল পরিচালিত না হলে দ্বাদশ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, বিএনপির মধ্যকার উত্তাপ, শঙ্কা, সন্দেহ আরও বাড়বে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বলেন, দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছেÑ কোনো কোনো প্রভাবশালী দেশ চাচ্ছে না নেতৃত্বে তারেক রহমান এবং দলটির
সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক থাকুক; কিন্তু এই বাধা দূর করতে বিএনপির কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে একটি উইং থাকলেও তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। কূটনৈতিক উইংয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, তিনি একজন সদস্য হলেও এই উইংয়ের কাজ কী, তা জানেন না। আবার কমিটিতে যারা আছেন, তাদের কারও কারও বিষয়ে একটি প্রভাবশালী দেশের আপত্তিও রয়েছে। আমাকে বুঝতে হবে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রÑ কোন দেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে তা অনুপস্থিত। এ বিষয়গুলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন।
দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের মাঝে নানা কারণে কিছুটা আশা ছিল। এবার ন্যূনতম কোনো আশা দেখতে পাচ্ছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। এমন প্রেক্ষাপটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার একটি প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে দলের ভেতরে অনেকেই মনে করেন। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছু সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে নানা কারণে বঞ্চিত সাবেক মন্ত্রী-এমপিরাও যুক্ত রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে দলের সিনিয়র নেতাদের কাছেও তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষুব্ধ হন দলটির নেতাকর্মীরা। ওই সংবাদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার মন্তব্য পড়ে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিএনপিসহ ১৫ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন একযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দেয়। তরুণ নেতারাও ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা স্ট্যাটাস দেন। এ অবস্থায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গত শনিবার আবার ডা. জাফরুল্লাহ বিএনপি ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের মাঝে ছাত্রদলের একদল নেতা তাকে থামিয়ে দেন।
তবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে প্রকাশ্যে এমন আচরণ করা ছাত্রদল নেতাদের কোনোভাবেই উচিত হয়নি বলে মনে করেন দলের একাধিক নেতা। কারণ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও ডা. জাফরুল্লাহর খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্মান বৃদ্ধি পায়নি, বরং হানি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সম্প্রতি তারেক রহমানকে নিয়ে একটি পত্রিকার সঙ্গে এক সিনিয়র নেতার করা মন্তব্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ওই সিনিয়র নেতার দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে তার কাছে অন্য সিনিয়র নেতারা জানতে চান।
গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগের দিনের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বে কোনো সমস্যা নেই। বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল, এটি একটি হেট্রোজেনিয়াস পলিটিক্যাল পার্টি, কোনো মনোবৃত্তিক পলিটিক্যাল পার্টিও নয়। সেই জায়গায় কিছু কথা থাকবে, যেহেতু গণতান্ত্রিক দল সেখানে বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা থাকবে। কিন্তু তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অতীতে যা ছিল বর্তমানে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আছে। একযুগ ধরে যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, তার মধ্যেও দেখে বিএনপি এখন পর্যন্ত সোজা হয়ে মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দ্যাট ইজ দ্য রিজনÑ বিএনপি সত্যিকার অর্থে জনগণের দল, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে এই দল ধারণ করে আছে এবং তারেক রহমান সাহেব এ দুর্দিনে সুদূর লন্ডন থেকে যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই নেতৃত্বে গোটা দল আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে।
বিএনপিকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনার প্রসঙ্গ টেনে মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এ সরকার জনগণের সব অধিকারকে কেড়ে নিয়ে এই রাষ্ট্রকে যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সে ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় কোনো লেখা দেখি না। সেখানে বিএনপির সমালোচনা, বিএনপিকে নিয়ে উঠে পড়ার কারণটা কী থাকতে পারে? সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে, দ্যান বিএনপি ইজ এ ফ্যাক্টর এবং তারেক রহমান আরেকটা বড় ফ্যাক্টর। সে কারণে তারেক রহমান সম্পর্কে তৈরি করা, মনগড়া কথাবার্তা সবাই লেখেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। যারা বিএনপির বিরুদ্ধে লিখছেন তারা নিঃসন্দেহে ভুল তথ্য থেকে লেখেন, বিভ্রান্ত হয়ে লেখেন এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। এটি আমি মনে করি, দিস নট ক্রাইসিস অ্যাট দিস টাইম এবং পত্রিকাগুলো প্রায়োরিটি ফিক্সডআপ করতে পারছে না। প্রায়োরিটি শুড বি হেলথÑ করোনা, প্রায়োরিটি শুড বি মেগা করাপশন, প্রায়োরিটি শুড বি ঢাকা টু গাজীপুর রোড, প্রায়োরিটি শুড বি দেওয়ার ইজ নো বেড ইন দ্য হসপিটাল, নো অক্সিজেন, প্রণোদনা নেই, মানুষ খেতে পারছে নাÑ চাকরিচ্যুত হচ্ছে মানুষ, নতুন করে দুই কোটি দরিদ্র হয়েছে। কোথায় এসব প্রতিবেদন? এসব কি বিএনপির একার দায়িত্ব? মিডিয়ার কি কোনো দায়িত্ব নেই? কোনো দেশে গণতন্ত্র সফল হয়েছে মিডিয়ার একটা ভূমিকা ছাড়া?’
Leave a Reply