1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

করোনার চেয়ে বড় আতঙ্ক লকডাউন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

দেশে নতুন করে কঠোর লকডাউনের সরকারি ঘোষণায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ীদের কপালে। বিশেষ করে এ ঘোষণায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে। পুরনো ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর লকডাউনের খবরে আবার আয়শূন্য হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে তাদের। কোভিড-১৯ ভাইরাসের চেয়ে লকডাউন নিয়েই বেশি আতঙ্কিত তারা।

শাহবাগ মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক কলি। করোনার প্রথম ধাক্কায় দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ থাকায় পুঁজি হারিয়ে ঋণের বোঝা ভারী হয়েছে তার। মৌ পুষ্প বিতানের তরুণ এ ব্যবসায়ী বলেন, এখন আর করোনায় ভয় পাই না। ভয় পাই লকডাউনের। দফায় দফায় লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় দেনা বেড়েছে। সংসার তো চালাতে হবে। সর্বশেষ রোজার ঈদের পর নতুন করে লাখখানেক টাকা ঋণ করে দোকান খুলেছি। এরই মধ্যে আবার লকডাউনের খবর। এবার হয়তো হেরে যাব। পরিবার নিয়ে গ্রামেই ফিরে যেতে হবে।

কলির মতো আতঙ্কিত রাজধানীর অনেক ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, করোনায় জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে অতিক্ষুদ্র ও অণু ব্যবসায়ীরা বেশি বিপদে রয়েছে। কারণ তাদের পুঁজি কম। করোনাকালে অর্ধ কোটিরও বেশি ক্ষুদ্র ও অণু ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা হারিয়েছেন। তাদের সিংহভাগই এ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। যারা এখনো কোনো রকমে টিকে আছেন। শাটডাউনের খবরে তারাও আতঙ্কে রয়েছেন।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে আগামী সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ জারির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আবার জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্ট সব শ্রমিক।

সম্প্রতি এক ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বল্প আয় ও অনানুষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্তরা চাকরি ও উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। ৭৭ শতাংশ পরিবারে করোনার কারণে গড় মাসিক আয় কমেছে এবং ৩৪ শতাংশ পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। ওই সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২ ভাগ কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, লকডাউন দিলেই তো হবে না। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সাপের দংশন থেকে বাঁচাতে বাঘের মুখে ফেললে হবে না। করোনা থেকে বাঁচাতে গিয়ে ক্ষুধায় মেরে ফেলা যাবে না। করোনা মোকাবিলা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। যতদিন কঠোর লকডাউন থাকবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অবশ্যই খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খিলগাঁওয়ের লাইট-সাউন্ড ও মাইক ব্যবসায়ী মো. হোসেন। সাউন্ড মেকার প্রতিষ্ঠানের এ কর্ণধার বলেন, করোনায় এমনিতেই বিয়েশাদিসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন কমে গেছে। ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন সাদামাটাভাবে পালিত হচ্ছে। এতে আমাদের আয় রোজগার তলানিতে ঠেকেছে। এখন আবার শাটডাউন হবে, কতদিন চলবে তার ঠিক নেই। আর কত ঋণ করে জীবনধারণ করা যায়। এবার কপালে কী আছে জানি না।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন বলেন, করোনায় রেস্তোরাঁ খাতে বহু শ্রমিক ও কর্মচারী তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। কারণ রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলেও এ খাতে কর্মচারী ও শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা করতে হয় মালিককেই। তা ছাড়া পরিচালনা খরচ, ট্যাক্স, ইউটিলিটি বিল রয়েছে। এ সময় রেস্তারাঁ খাতে বড় লোকসান হওয়ায় মালিকরা কর্মচারীর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কর্মচারী দিয়ে চলছে। আবার লকডাউনে রেস্তোরাঁ বন্ধ হলে কর্মচারী ছাঁটাইয়ের হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, করোনার কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা গড়ে ৯৫ দিনের মতো কাজ পাননি। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছেন। তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান আমাদের সময়কে বলেন, করোনার শুরু থেকেই জীবন ও জীবিকার যে দ্বন্দ্বটা রয়েছে, সেখানে এ দুটিকে বাদ দিয়ে তো আর সামনে আগানো যাবে না। সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে। করোনার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নতুন গরিবদের যে সংখ্যা বাড়ছে তার মধ্যে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে সামনে লকডাউন-শাটডাউনে এসব শ্রেণির মানুষ কীভাবে টিকে থাকবেন সেটা অবশ্যই বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, করোনার শুরু থেকেই আমরা প্রণোদনার কথা বলে আসছি। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এর কার্যকর সুফল পায়নি। সানেমের গবেষণাতেও বিষয়টি উঠে এসেছে যে, এ পর্যন্ত যা দেওয়া হয়েছে তা পেয়েছেন মূলত বড় ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু এসব ব্যবসায়ীই তো প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। এর তা হলে কোথায় যাবে।

সেলিম রায়হান বলেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বিশেষ করে অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থেকে সুবিধা পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোও তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে না। ঋণ দেওয়ার বেলায়ও গড়িমসি করা হয়। সুতরাং এমন কঠিন সময়ে সরকারের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। নইলে এরা টিকে থাকতে পারবে না। দরিদ্রের সংখ্যা আরও বাড়বে। সরকারের উচিত ব্যবসা খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের কাছে প্রণোদনার সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। অতিক্ষুদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এনে সুবিধা দিতে হবে। যাতে তাদের খাবারের দুশ্চিন্তাটা যেন না করতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com