বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে নাটকের জয়জয়কার। বিশেষ করে ইউটিউবে নাটকের দর্শক অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। তাই নাটক নির্মাণ হচ্ছে হিসাবের চেয়েও বেশি। ফলে শিল্পী থেকে শুরু করে সবারই ব্যস্ততা এখন অনেক বেশি। আবার করোনার কারণে সিনেমা মুক্তি বন্ধ রয়েছে। তাই মানুষের প্রধান বিনোদনমাধ্যম এখন নাটক। আর এসব নাটকে নায়ক-নায়িকাদের পাশাপাশি সহশিল্পীদের গুরুত্বও অনেকটা বেড়েছে। ফলে শুধু তারকাদের নিয়েই নাটক হচ্ছে, তা নয়। তারকাদের পাশাপাশি ক্যারেক্টর আর্টিস্টদের ওপরই বেশি নির্ভর করছেন নির্মাতারা। আর যখনই পরিচালক গল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তখনই এসব শিল্পীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে এসব শিল্পীকে নাটকের অলঙ্কার বলা চলে।
নাটককে প্রাণবন্ত করতে এমন ক্যারেক্টর আর্টিস্টদের জুড়ি নেই। দেখা গেল, একটি নাটকে ডাকাতের সর্দার আছেন একজন। সর্দার যেহেতু আছে, তা হলে শিষ্য তো রাখতেই হবে। আর এসব চরিত্রে তাদের জুড়িমেলা ভার। এমন কয়েকজন শিল্পীর অভিনয় হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এমনই একজন আনন্দ খালেদ। টিভি নাটক যারা দেখেন, সবাই তাকে চেনেন। তিনি এ সময়ের ব্যস্ততম অভিনয়শিল্পী। প্রতিটি নাটকে তাকে যেন রাখতেই হবে। আবার যেসব চরিত্রের জন্য তাকে নির্বাচন করা হয়, সেসব চরিত্রে তার বিকল্প আর কেউ আছে বলে মনে হয় না। জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থেকে শুরু করে আফরান নিশোর বন্ধুর চরিত্রে যেন আনন্দ খালেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার শরীরের গঠনটাই চরিত্রের সঙ্গে মিশে যায়। কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে চলাফেরাতেও চরিত্রের সঙ্গে মানানসই বলে মনে হয়। যার কারণেই একের পর এক নাটকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এমন শিল্পীর কথা বলতে গিয়ে আনোয়ার হোসেনের নামও বলতে হবে। মোটাশোটা দেখতে। গায়ের রঙ থেকে শুরু করে সবকিছুই যেন চরিত্রের প্রয়োজনে গড়া। এ সময়ের যত নাটক হচ্ছে, এর মধ্যে ৮০ ভাগ নাটকে তাকে দেখা যায়। গত ঈদুল ফিতরে তার অভিনীত ২৩টি নাটক প্রচার হয়। সামনের ঈদে সংখ্যাটা কোথায় দাঁড়াবে, বলা মুশকিল। একটি গল্প কতটা বাস্তবসম্মত হবে, আবার সেই বাস্তব ঘটনার চরিত্রগুলোও মিলিয়ে এগিয়ে যাবে নাটকের সাফল্য। আর সেই সাফল্যের পথ পুরোটাই রপ্ত করে ফেলেছেন আনোয়ার। তাই তো অধিকাংশ নাটকেই যেন তার জন্য চরিত্র বরাদ্দ রাখা হয়। পরিচালকদের ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন তিনি।
অন্যদিকে নিকুল কুমার মন্ডল নিজেকে অন্যরকমভাবে হাজির করে চলেছেন। কাজ করেন কম, কিন্তু নজরকাড়া চরিত্রে দেখা যায় তাকে। একটি নাটকের ছোট্ট কোনো চরিত্রে ক্ষণিকের উপস্থিতি থাকে, তবে বোঝার ভাষা থাকে অনেক। এমন চরিত্রে নিকুল নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু নাটকেই নয়, সিনেমাতেও চমক দেখিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই চমক জাগানিয়া বেশকিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মাঝখানে কিছুটা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু আবারও নিজের কাজে মনোযোগী হয়েছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে এবারের ঈদে।
এদিকে তানজিম হাসান অনিক ছাড়া যেন নাটকের কথা ভাবাই যাচ্ছে না। মহল্লার বখে যাওয়া ছেলের চরিত্রে তার জুড়ি নেই। আবার বিপদে কারও পাশে দাঁড়াবে একটি ছেলে, এমন চরিত্রেও অনিক বেশ মানানসই। নাটকের আসল জায়গাতে তিনি ছাড়া যেন চলেই না। নির্মাতারা অনিকের ওপরই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে সিয়াম নাসির নিজের যোগ্যতা দিয়ে কঠিন পথটাকে সহজ করে তুলেছেন। সব ধরনের চরিত্রে মনোযোগী অভিনেতা তিনি। নাটকের প্রতি ভালোবাসা তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। নামের প্রতি সুবিচার করেই চলেছেন। যার প্রমাণ সিয়াম নাসির অভিনীত নাটকগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
Leave a Reply