কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক। উভয়পক্ষই মনে করছে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এখন একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মুখোমুখি বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এটা সুখকর কোনো সাক্ষাৎ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। জেনেভায় বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকটি সন্দেহাতীতভাবে হেলসিংকির বৈঠকটির মতো হবে না। বরং এ বৈঠক বেশ ভিন্নই হবে। রাশিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের অবস্থান কঠোর। ফলে তার এ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বৈঠকে পড়তে পারে। দুদেশের এই বৈরী সম্পর্কে আরও যুক্ত হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য। এক সাক্ষাৎকারে পুতিনকে তিনি ‘একজন খুনি’ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু এত কিছুর পরও এই দুজন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে এই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। রাশিয়ার কিছু মানুষ এটাকেও এক বড় অর্জন বলে মনে করেন। মস্কোর একটি থিংকট্যাংক রিয়াকের পরিচালক আন্দে কুর্টানভ বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রতীকী তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করলে এই শীর্ষ বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ; এটি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে এক কাতারে স্থান দিচ্ছে। পুতিনের কাছে এই প্রতীকী ব্যাপারটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ এই বৈঠকটি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউজে আসার পর একেবারে প্রথম পর্যায়ে এবং তার প্রথম বিদেশ সফরের সময়। তিনি নিজেই এরকম একটি বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন। এগুলো পুতিনের জন্য বোনাস পয়েন্ট। আর এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শীর্ষ বৈঠক, অন্য কোনো অনুষ্ঠানের ফাঁকে কোনো সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ নয়। টাইমসের প্রতিবেদন মতে, জেনেভায় বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তার কিছুটা আভাস উভয়পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, মানবাধিকার, ইউক্রেন, বেলারুশ প্রভৃতি প্রসঙ্গ। ‘দ্য নিউ কোল্ড ওয়ার : পুতিন’স রাশিয়া অ্যান্ড দ্য থ্রেট টু দ্য ওয়েস্ট’ বইয়ের লেখক অ্যাডওয়ার্ড লুকাসের মতে, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বাইডেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সাই নাভালনির প্রসঙ্গ তুলতে পারেন। তাকে গত বছরের আগস্টে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে হত্যাচেষ্টা হয়েছিল। এ জন্য মস্কোকে দায়ী করা হয়। তবে মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। জার্মানিতে চিকিৎসা নিয়ে রাশিয়ায় ফেরার পর নাভালনিকে দণ্ড দিয়ে এরই মধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উভয় দেশের প্রেসিডেন্ট আলোচনা করবেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘অবন্ধু-সুলভ দেশ’র তালিকায় যোগ করেছে রাশিয়া। কোনো দেশেরই একে অপরের দেশে কোনো রাষ্ট্রদূত নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, রাশিয়ায় বিরোধীদের ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মস্কোর ওপর একাধিক দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
Leave a Reply