‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা হুনলেই আমরা ডরাই। এইবারের ঝড়ের সময় জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভাইঙ্গা পানি ভিতরে ঢুইক্কা আমাগো ঘরবাড়ি ডুইব্বা গেছে। ঘরের মইধ্যে যেইটুক খাবার আছিল সবই ভিইজ্যা গেছে। পরে জোয়ার নাইম্মা গেলেও আমাগো কষ্টের শেষ নাই।’ গত মঙ্গলবার (১ জুন) কান্নাকণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মনপুরা উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের চরযতীন গ্রামের নাজমা বেগম।
এ প্রতিবদক যখন নাজমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, পাশেই ছিলেন তার প্রতিবেশী আব্দুল খলিল, জরিনা বেগম, পরীক্ষিত চন্দ্র দাস, মো. স্বপনসহ আরও কয়েকজন। সবার একই ভাষ্যÑ ‘জোয়ারের ধাক্কায় আমাগো ঘরের বেড়া ছুইট্যা গেছে। ভিটার মাটি সইরা গেছে। ঘরে থাকার কোনো উপায় না থাকায় অনেকে সরকারি বেড়ির ওপর এসে ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন। তারা আরও বলেন, ‘ঘর মেরামত করবার কোনো টাহা-পয়সা নাই। ধার-দেনা কইরা ঘরডা উডানোর চেষ্টা করছি।’ ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ এ মুহূর্তে চান সরকারি সহযোগিতা।
সরকারি হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মনপুরা উপজেলার ৩২০টি বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০টি। এ ছাড়া জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে গেছে ২৯টি গবাদিপশু। শস্যক্ষেত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হেক্টর ও আংশিক ৪৮ হেক্টর। আর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হেক্টর। এ ছাড়া মসজিদ সম্পূর্ণ ১টি এবং আংশিক ২টি, পাকা সড়ক ১১ কিলোমিটার, হেরিংবোন ২ কিলোমিটার, কাঁচা রাস্তা ২৫ কিলোমিটার, ব্রিজ ২টি, নলকূপ ২টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছ ভেসে গেছে ৬৬৫টি পুকুরের।
ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে হাজীরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, চরযতীনের পূর্ব ও পশ্চিমের বেড়িবাঁধ, সোনারচরের পূর্ব ও পশ্চিমের বেড়িবাঁধ, চরফৈজুদ্দিনের পশ্চিম পাশের ব্রিজের পাশের বেড়িবাঁধ, মনপুরা ইউনিয়নের কুলাগাজী তালুক গ্রামের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ, কাউয়ারটেক গ্রামের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টারহাটের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সূর্যমুখী বেড়িবাঁধ, বাতির খাল ও ঢালী মার্কেটসংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখিত ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোর কিছু কাজ এরই মধ্যে করে দেওয়া হয়েছে। বাকি বাঁধগুলোর সংস্কারের কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মেরামত করা হয়েছে। বাকি বেড়িবাঁধগুলো যাতে আরেকটু মজবুতভাবে করা যায়, সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply