মুক্তিযুদ্ধের পর পরই ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে লাকী আখন্দ, হ্যাপি আখন্দ, বন্ধু নিলু আর মনসুরকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ডদলটি। ওই বছরই তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচারের পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়। যার কথা বলছি তিনি বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ডসংগীতের গুরু আজম খান। আজ তার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
১৯৭৪ সালে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ঐ বস্তিতে’ শিরোনামের গানটি গেয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন গুরু আজম খান। ১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ নামে তার প্রথম ক্যাসেট বের হয়। তার গাওয়া গানের প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।
১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে বসবাস শুরু করে আজম খানের পরিবার। তিনি শুধু সংগীতশিল্পীই নন, মাত্র ২১ বছর বয়সে ঢাকা উত্তরের সেকশন কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উচ্চারণের গান সংগীত জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা উপমহাদেশেই আজম খান পেয়েছিলেন অসাধারণ জনপ্রিয়তা। বিশ্বের বেশ কটি দেশে কনসার্ট পরিবেশন করেন এই পপগুরু।
আজম খানের পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীকালে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের সঙ্গে। একসঙ্গে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা। এরই মধ্যে আরেক বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাব না এ হে হে!’ বলা হয়, এটি বাংলা গানের ইতিহাসে প্রথম হার্ডরক গান!
গানের পাশাপাশি ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামন সিরিজের নাটকে অভিনয় করেন। এ ছাড়া ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন আজম খান। সর্বশেষ ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন এই পপসম্রাট।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্ম নেন এই রকস্টার। তার বাবা বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। আজম খান বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার আলম খানের ছোট ভাই।
Leave a Reply