বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে সরকার নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের শুরু থেকে এর বিরোধিতা করে আসছিল জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। কিন্তু স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা বারবার বলেছে, টেকনাফ উখিয়ার ঘিঞ্জি ক্যাম্পের চেয়ে ভাসানচরে যেতে পেরে তারা খুশি। সেখানে ক্যাম্পের চেয়ে ভালো পরিবেশ ও থাকার জায়গা পেয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে ভাসানচর প্রকল্প নিয়ে বিদেশি সংস্থাগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে এবার জাতিসংঘ ভাসানচরের সার্বিক কর্মকা-ে যুক্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ (ইউএনএইচসিআর) এর বিভিন্ন সংস্থা কীভাবে ভাসানচরের কাজের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে, তা ঠিক করতে ত্রাণ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, দ্রুত ভাসানচরের কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হবে বৈশ্বিক সংস্থাটি।
এদিকে ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার চার দিনের সফরে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গতকাল সোমবার তারা ভাসানচর পরিদর্শনও করেছেন। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পর ইউএনএইচসিআর সদর দপ্তরের কোনো প্রতিনিধির এটিই প্রথম ভাসানচর সফর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাসানচরে ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনারের যাওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে আপত্তির মধ্যেই গত মার্চে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করে। জায়গাটি ঘুরে দেখে এবং সেখানকার সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানার পর তারা আগের অবস্থান থেকে নমনীয় হয়। ওই সফর নিয়ে সরকারের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে তেমন ইঙ্গিতই আছে। এমনকি গত সপ্তাহে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির ভাসানচর প্রকল্পের প্রশংসা করে গেছেন। সরেজমিন ভাসানচর পরিদর্শনে না গেলেও ভিডিও প্রদর্শনী দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, ভাসানচরের জাতিসংঘের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে গত ২৩ মে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে তার দপ্তরে একটি বৈঠক হয়। ত্রাণ সচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে কথা বলে একটি সুপারিশ জমা দেবে। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি জাতিসংঘের ভাসানচরে যুক্ততার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ছয় দফায় টেকনাফ উখিয়ার ক্যাম্পগুলো থেকে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় আপাতত রোহিঙ্গাদের আর ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে না।
Leave a Reply