কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সামুুদ্রিক শৈবাল চাষ বদলে দিয়েছে ৭ তরুণ উদ্যোক্তার ভাগ্য। জেলায় প্রথমবারের মতো কৃত্রিম জলাধারে সবুজ হীরাখ্যাত স্পিরুলিনা (সামুদ্রিক শৈবাল) চাষ হচ্ছে। এতে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে স্বপ্ন দেখছেন এসব উদ্যোক্তা। সরকারি সহায়তায় এর কেমিক্যাল সহজলভ্য হলে এটি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে দাবি তাদের। জানা যায়, জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিসামত প্রাণকৃষ্ণ গ্রামে দেশের বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধারে সামুদ্রিক শৈবাল খামারে চাষ করেছেন ফুলবাড়ীর ৭ তরুণ উদ্যোক্তা। বর্তমানে ২৪ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার তৈরি করেছেন তারা। খোলা জায়গায় স্পিরুলিনা চাষের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা এই কৃত্রিম জলাধারের চারদিকে জাল আর পলিথিন দিয়ে নিখুঁতভাবে ঘিরতে হয়েছে। এই জলাধার তৈরি করতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ খামারে ২৪ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতার দৈর্ঘ্য ৩১ ফুট ও প্রস্থ ৭ ফুট মাপের দুটি হাউস রয়েছে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করার মতো স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ঘর রয়েছে। বীজ হিসেবে ১১ কেজি মা শৈবাল/মাদার কালচার পানিতে দেওয়া হয়। রোদ বেশি থাকলে উৎপাদন বেশি হয়। সমুদ্রের পানির উপাদানের জন্য জলাধারে সাত প্রকার ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এই ওষুধেই ছয় মাস পর্যন্ত চলে। এরপর পানির মাত্রা কমে গেলে তা বাড়াতে আবারও প্রয়োজন অনুপাতে একই উপাদান দিতে হবে। বর্তমানে এই জলাধার থেকে সপ্তাহে প্রায় ২০ কেজি করে শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে। সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে মাসে এই খামারে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান উদ্যোক্তারা। বর্তমানে স্পিরুলিনার দাম প্রতি কেজি ৬-৭ হাজার টাকা। এই শৈবালের মধ্যে ক্ষতিকর বস্তু কিছু নেই। বরং পুষ্টিমান ডিম, দুধ, মাংস, মাছ ও শাক-সবজির চেয়েও বেশি। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে মূল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশ-বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। স্বাদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন স্পিরুলিনা নিয়মিত সেবন করলে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিসসহ হাজারো রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
উদ্যোক্তা গোলাম মাসুদ জানান, তিনি শৈবাল চাষের ওপর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ কেজি করে উৎপাদন হচ্ছে যা কেজিপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। ৫-৭টি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মির্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথমবারের মতো স্পিরুলিনার চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খাদ্য, পুষ্টি গুণাগুণের বিবেচনায় এটিকে গ্রিন ডায়মন্ড বলা হয়ে থাকে। স্পিরুলিনা চাষ এভাবে বৃদ্ধি পেলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমি মনে করি আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল সম্ভাবনাময় খাত হবে এটি।
Leave a Reply