নওগাঁ সদরের শৈলগাছী ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের আগুনে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর এ ঘটনায় আইনি জটিলতা দেখিয়ে থানায় মামলা নিচ্ছিল না পুলিশ। ফলে নিহতের মরদেহ দাফন না করার সিদ্ধান্ত নেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে পরে মামলা নিতে বাধ্য হয় নওগাঁ থানা পুলিশ।
পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত ৩০ এপ্রিল রাতে রিতা বেগম নামক ওই গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে বগুড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানেই মারা যান তিনি।
তার মৃত্যুর পর নওগাঁ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সে মামলা নেয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- মরদেহের সুরতহাল যেহেতু বগুড়ায় হয়েছে, তাই বগুড়াতে গিয়েই মামলা দায়ের করতে হবে। এর প্রতিবাদে মামলা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ ছাড়া মরদেহ দাফন না করার সিদ্ধান্ত নেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এভাবে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা মরদেহ পড়ে থাকার পর মামলা গ্রহণ করে নওগাঁ থানা পুলিশ। মামলার আসামি- মোসলেমের ভাতিজা আলামিন প্রামাণিক, আলামিনের মা সাগিদা বেগম, মোসলেমের চাচাত ভাই সানোয়ার প্রামাণিক ও জলিল প্রামাণিক।
নিতের স্বামী মোসলেম উদ্দিন বলেন, বাড়ির দেড় কাঠা জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে। গত ২৪ এপ্রিল রাতে রিতা বেগমকে সামনে পেয়ে হুমকি দেয় তার ভাই ও ভাতিজা। আলামিন সেদিন তার স্ত্রীকে বলেন, পাঁচ দিনের মধ্যে জায়গা ছেড়ে না দিলে তাকে ও রিতাকে মেরে ফেলা হবে। ঘটনার পর গত ২৯ এপ্রিল চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
থানায় অভিযোগ করার দুদিন পর গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যা করা হয় রিতা বেগমকে। জানা গেছে, ঘটনার দিন, রাত একটার দিকে উঠানে থাকা শৌচাগারে যান রিতা। ফেরার পথে চার থেকে পাঁচজন গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। রিতার চিৎকারে মোসলেম উদ্দিনসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। আর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
গায়ের আগুন নেভাতে রিতা বেগম পুকুরে গিয়ে ঝাঁপ দেন। পুকুর থেকে তাকে তুলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মারা যান রিতা।
শনিবার বিকেল তিনটার দিকে মামলা করতে সরাসরি মরদেহ নিয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানায় যায় নিহতের পরিবার। থানা থেকে মরদেহটি দাফন করতে বাড়িতে নিতে বলা হয়। কিন্তু সেটি দাফন না করে বাবার বাড়ি সদর উপজেলা গাংজোয়ারে রাখা হয়। মামলা ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মরদেহ দাফন করা হবে না জানিয়ে ন্যায়বিচার দাবি করেন নিহতের পরিবার।
মোসলেম উদ্দিন জানান, মারা যাবার আগে রিতা তার ওপর হামলাকারী হিসেবে চারজনের নাম বলে গেছেন। যতক্ষণ না মামলা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হবে ততক্ষণ লাশ দাফন করা হবে না বলে তিনি হুমকি দেন। পরিবারটির অনমনীয় অবস্থান দেখার পর অবশেষে রাতে মামলা নিতে রাজি হয় নওগাঁ থানা। রিতার মা রোকেয়া বেগম মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত রিতা খাতুনের মেয়ে আরিফা ইয়াসমিন বলেন, ‘মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মা একটু একটু কথা বলতে পারত। মারা যাবার আগে চারজনের নাম বলে গেছে, যে তারাই গায়ে আগুন দিয়েছে।’ পরিবারটি যে চারজনের নামে অভিযোগ আনছে, তাদের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তালা ঝুলানো রয়েছে। মোবাইল ফোনও বন্ধ।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘যেহেতু মরদেহটির সুরতালহাল প্রতিবেদন বগুড়াতে করা হয়েছে তাই সেখানেই মামলা করতে বলা হয়েছিল। পরে তারা ক্ষোভ থেকে মরদেহটি দাফন না করায় আমরা মামলা গ্রহণ করি, এবং অভিযুক্তদের ধরতে এলাকায় পুলিশও পাঠাই।’ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
Leave a Reply