বোরো ধান উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষকরা। সেখানকার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে বাতাসের সাথে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। গতবছর ধানের দাম ভালো থাকায় এ বছর বোরো ধান চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৮৮ মে. টন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের কানিকশালগাঁও গ্রামের কৃষক মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, এবার ৫ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ফসলের অবস্থা খুব ভালো, পোকার আক্রমণ নেই। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সব করছি, আশাকরি গতবারের চেয়ে ভালো ফলন পাবো।
অপরদিকে, করোনাকালীন খাদ্য নিরাপত্তায় বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগ। যেমন সুষম ও জৈব সারের পর্যাপ্ত ব্যবহার এবং রোগ ও পোকা দমনে সঠিক পরামর্শ।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় জানান, কৃষক যাতে বোরো ধান নিরাপদে ঘরে তুলতে পারেন সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে ধানের অন্যতম একটি প্রধান রোগ ব্লাস্ট। ধানে ব্লাস্ট রোগের কারণে কখনো কখনো উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হতে পারে। ভেঙ্গে যেতে পারে কৃষকের স্বপ্ন সাথে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা।
ব্লাস্ট রোগ কি এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে কৃষকের করণীয় জানতে চাইলে রুহিয়া ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ তিন ধরণের; পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট এবং নেক/শীষ ব্লাস্ট। তার মধ্যে নেক ব্লাস্ট রোগটি সবচেয়ে ক্ষতিকর যা শীষ অবস্থায় আক্রমণ করে এবং এতে শীষ সাদা ও দানা অপুষ্ট হয়। রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম, কুয়াশাছন্ন আবহাওয়া, শিশির ভেজা সকাল, ঘন করে চারা লাগানো, পটাশ সারের কম ব্যবহার এবং ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার ব্লাস্ট হওয়ায় অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, ব্লাস্ট প্রতিরোধে ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠক, দলীয় সভা, কৃষক প্রশিক্ষণ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং ফসলের মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে ব্লাস্ট প্রতিরোধে কৃষকদের সচেতন ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে ট্রাইসাই কাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- ট্রুপার, বীর, জিল প্রতিলিটার পানিতে ০.৮ গ্রাম অথবা টেবুকোনাজল ট্রইফ্লু ট্রোবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- ব্লাস্টিন, নিউভো, নাটিভো, প্রতিলিটার পানিতে ০.৬ গ্রাম হারে বিকাল বেলায় স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া যেসব জমির ধান নেক/শীষ ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়নি অথচ এলাকায় রোগের অনুকুল আবহাওয়া বিরাজমান, সেখানকার ধানের জমিতে রোগ হোক বা না হোক ধানের শীষ বের হওয়ার আগ মুহুর্তে উল্লিখিত অনুমোদিত ছত্রাকনাশক নির্দিষ্ট মাত্রায় পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে শেষ বিকালে ৫-৭ দিন অন্তর দু’বার প্রয়োগ করতে হবে।
Leave a Reply