প্রথমে এক সপ্তাহের ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ শুধু জরুরি সেবা ও গার্মেন্টস খোলা ছিল। গণপরিবহন, মার্কেট, অফিস, আদালত সব বন্ধ রাখা হয়। পরে লকডাউন আরেক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দোকানপাট-শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ রোববার মার্কেট খুলছে। গণপরিবহনও চালুুর চিন্তাভাবনা চলছে। বলা হচ্ছে- সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন শিথিল করছে। কারণ সামনে ঈদ। জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় রেখে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি অফিসও চালুর ভাবনা আছে সরকারের। তবে শিথিলতা এলেও মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের বিষয়ে সতর্ক থাকবে প্রশাসন।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৭ ঘণ্টা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে দোকানপাট ও শপিংমল। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার অথবা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে গত রোববার রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু ছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রিভেন্টেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘লকডাউন যেভাবে দেওয়া হলো, আবার যেভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে- এ প্রক্রিয়াগুলো যথাযথ নয়। লকডাউন তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক ধাপ রয়েছে তা মানা হচ্ছে না। সরকার যে ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে, এখানে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এর ফলে লকডাউন ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনের ফলে দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় আমাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অথচ সরকার লকডাউনের মধ্যেই মার্কেট-দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। আগে ভুল করেও পার পাওয়া গেলেও এবার সহজে পার পাওয়া যাবে না। লকডাউন হলে পরিপূর্ণ লকডাউন হতে হবে। যেমন খুশি তেমন হলে চলবে না। তা থেকে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায় না।’
চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার। এর আগেই সার্বিক চলাচলে শিথিলতা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নিশ্চিতে জোর দেওয়া হবে।
Leave a Reply