হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও ‘শিশু বক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিয়ে সমালোচনা করায় বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসবি গোলাম মোস্তফা। এক সালিসে হেফাজত নেতাকর্মীরা তাকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় উপজেলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। জানা গেছে, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিষয়টি জেনেছেন। পরে তিনি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে ফোন দিয়ে এসবি গোলাম মোস্তফার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার সকালে দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে একটি হোটেলে নাস্তা করছিলেন প্রধান শিক্ষক এসবি গোলাম মোস্তফা। কথা প্রসঙ্গে তিনি হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও রফিকুল হক মাদানী ধর্মের অপব্যাখ্যা করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন বলে পরিচিতজনদের সতর্ক করেন। এ সময় স্থানীয় এক হেফাজত নেতা তার বক্তব্য শুনে গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমানার অভিযোগ তোলেন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। বাংলাবাজারে বিক্ষোভও করেন মামুনুল হকের অনুসারীরা।
খবর পেয়ে দিরাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন, সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম, রফিনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজোয়ান হোসেন খানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জরুরি সভায় বসেন। সভায় হেফাজতের স্থানীয় অনুসারীরাও যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা এসবি গোলাম মোস্তফাকে চাকরিচ্যুতির আহ্বান জানান।
এক পর্যায়ে তাদের অনড় অবস্থানের কারণে ও প্রশাসনের অনুরোধে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চান। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলেও হেফাজত অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে।
ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কী বলেছেন আমরা কেউ শুনিনি। হেফাজতের স্থানীয় একজন হুজুর বিষয়টি শুনে অন্যান্যদেরও অবগত করেন। এতে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা ওই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতিরও দাবি জানান। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করে নিবৃত্ত করি। পরে প্রধান শিক্ষক তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।’
দিরাই থানার ওসি মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘খবরটি শোনার পরই আমার ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। তবে কিছু লোক প্রধান শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি ও বিচার দাবি করেছিল। আমরা বুঝিয়ে বিষয়টি শেষ করে দিয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
বিকেলে বিষয়টি জেনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাকে কেউ অপদস্ত করতে চাইলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বলেও জানান।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী রফিনগরের ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে ওই শিক্ষককে ফোন দিয়ে বলেছি কেউ যদি তাকে হুমকি, ধামকি বা হেনস্তা করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাকে আমার নিজের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণের এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় ফোন দিতে বলা হয়েছে। প্রত্যেককে বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখতে বলা হয়েছে।’
Leave a Reply