দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৬৫ জন, যা তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত বাড়তে থাকায় করোনা হাসপাতালে রোগীও বেড়েছে। এক মাসে এসব হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৫০ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ৮৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
করোনা রোগীর চিকিৎসায় ঢাকা মহানগরীর ১৯ হাসপাতালে ১১৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৪টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে। খালি ২৩টি। ঢাকার তিনটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সেগুলো হচ্ছেÑ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল ও এভারকেয়ার হাসপাতাল।
আইসিইউ ছাড়াও করোনার চিকিৎসায় ঢাকা মহানগরীতে ১০টি সরকারি ও ৯টি বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে দুই হাজার ৩৮১টি। এর বিপরীতে এক হাজার ৪২৯ জন ভর্তি আছেন। খালি রয়েছে ৯৫২টি শয্যা। এক মাসে আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শয্যায় ৮৯৪ এবং আইসিইউতে ৭১ রোগী ভর্তি ছিলেন। হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে একদিনে ঢাকার করোনা হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ৫৩৫
এবং আইসিইউতে ২৩ জন রোগী ভর্তি বেড়েছে। শতকরা হিসাবে সেটা সাধারণ শয্যায় ৫০ দশমিক ৯০ এবং আইসিইউতে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সারাদেশে করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৩০৫টি সাধারণ শয্যা ও ৫৫৮টি আইসিইউ মিলিয়ে ১০ হাজার ৮৬৩টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় বর্তমানে দুই হাজার ৩৬৭ এবং আইসিইউতে ২৮৭ জন ভর্তি আছেন। এক মাস আগেও (১৭ ফেব্রুয়ারি) সাধারণ শয্যায় এক হাজার ৩৬৪ এবং আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ১৫২ জন। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে একদিনে হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি এক হাজার ৩ এবং আইসিইউতে ১৩৫ জন বেড়েছে। শতকরা হিসাবে রোগী ভর্তি বেড়েছে সাধারণ শয্যায় ৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আইসিইউতে ৮৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর আগের মাস অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ শয্যায় এক হাজার ৮৪৭ এবং আইসিইউতে ৩২৮ রোগী ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ শয্যায় ২ হাজার ৭৬১ এবং আইসিইউতে ছিলেন ৩০৩ রোগী। ১৭ নভেম্বর সাধারণ শয্যায় দুই হাজার ৬৩৯ এবং আইসিইউতে ২৭৭ জন ছিলেন। ১৭ অক্টোবর সাধারণ শয্যায় দুই হাজার ৪২৬ এবং ২৬১ জন ছিলেন আইসিইউতে।
২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু
গত একদিনে আরও এক হাজার ৮৬৫ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গতবছরের ১৫ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এক হাজার ৮৭৭ নতুন রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এতে রোগী শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জন। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী।
করোনা রুখতে ১২ সুপারিশ
নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভায় প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়।
প্রস্তাবগুলো হলো- সম্ভব হলে সম্পূর্ণ লকডাউন দেওয়া, নাহলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রেখে জনসমাগম বন্ধ করা; কাঁচাবাজার, গণপরিবহন, শপিং মল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট, ওয়াজ মাহফিল, রোজায় ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখা; পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা; করোনা রোগীদের আইসোলেশন জোরদার করা; রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা; বিদেশ থেকে আসা বা প্রবাসীদের ১৪ দিনের কঠোর কেয়ারেন্টিনে রাখা ও এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া।
এ ছাড়া আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা; স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন জোরদার করা; পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল বাড়ানো ও মনিটরিং জোরদার করা; সব ধরনের সভা ভার্চুয়ালি করা এবং পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করা।
Leave a Reply