প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারীতেও দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর যে হারে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, করোনাকালীন সময়ে তা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল আঁচল ফাউন্ডেশনের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আত্মহত্যার ওপর প্রকাশিত একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, গতবছর করোনাকালীন সময় দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জনের। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কিছুটা বেশি। সেই তুলনায় এক বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৪৩৬টি, যা ৪০ শতাংশ বেশি।
সংগঠনটি বলছে, দেশের দৈনিক গণমাধ্যম ও হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পর্যবেক্ষণ করে জরিপটি করা হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনটি ৩২২টি আত্মহত্যার বিষয়ে বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যাকারীদের বয়স, লিঙ্গ ও আত্মহত্যার কারণ ফুটিয়ে তুলেছে। জরিপটি গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে আরও জানানো হয়, দেশে মোট আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ পুরুষ, বাকি ৪৩ শতাংশ নারী। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন। যেসব কারণে আত্মহত্যা করেছে, সেগুলোর মধ্যে আর্থিক, পড়াশোনা, পারিবারিক সম্পর্কজনিত জটিলতা, হতাশা ও বিষণ্ণতা অন্যতম।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই করোনাকালে লিঙ্গ, শ্রেণির ভিন্নতায় আলাদা আলাদা রকমের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কারও চাকরি নেই, কেউ স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত, কেউ ব্যবসায়িক কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কেউ আবার নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে। আর সে অবসাদই ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে।
অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের জোর দাবি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি পরিবার কীভাবে আত্মহত্যা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে রূপরেখা দাঁড় করানো দরকার। সবাইকে সচেতন না করতে পারলে ফলাফল অধরাই থেকে যাবে।
Leave a Reply