ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সম্ভাব্য সূচি প্রস্তুত। সূচি অনুযায়ী দুদিনের সফরে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করবেন তিনি। ইতোমধ্যে তার সফরের অগ্রবর্তী দল ঢাকা ঘুরে গেছে। ঢাকা এবং এর বাইরে মোদির সম্ভাব্য কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভেন্যুগুলোর যাতায়াত, প্রটোকল তথা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় খতিয়ে দেখে গেছে দলটি। আগামী ২৬ ও ২৭ মার্চের প্রস্তাবিত সফরের আলোচ্যসূচিসহ সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করও।
সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হবে পুরো ঢাকা শহর ও তার সম্ভাব্য গন্তব্যগুলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং তার সংস্পর্শে যাদের আসার সম্ভাবনা আছে তাদের সবার করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে। ৪৮ ঘণ্টার আগের করোনামুক্তির সনদ না হলে কেউ প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে ট্রানজিট, কানেকটিভিটি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপানাসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্যমান বন্ধুত্বের নবদিগন্তের সূচনা হবে বলে ঢাকার আশা। করোনার কারণে তৈরি হওয়া ইকোনমিক ইমার্জেন্সি, কাঁচামাল আমাদানি, স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনা, পানি, নদীসহ সব বিষয়েও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হবে। একটি সমন্বিত অংশীদারিত্বের প্রস্তাবও আসতে পারে। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের
অগ্রাধিকার থাকলেও মোদির এ সফরে চুক্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই সূত্র জানিয়েছে।
২৬ মার্চ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নতুন একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত এ নতুন ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা থেকে সেই ট্রেনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
২৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদি সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দিরে যাবেন। এর পর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত গোপালগঞ্জ যাবেন তিনি। সেখানে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন। পরে তিনি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতেও যাবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মৌসুমে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরকে রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার করতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশে বিপুলসংখ্যক মতুয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ার মতো জায়গায় মতুয়া ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর। এ পরিস্থিতিতে মতুয়ার ধর্মমতের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ি দেখতে যাবেন মোদি। সেখানে গেলে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়কে একটি বার্তা দিতে পারবেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ আসনে বিজেপি জিতেছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যৌথ আয়োজনে অংশ নিতে ঢাকা আসছেন নরেন্দ্র মোদি। সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী তিনি ২৬ মার্চ বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখান থেকে সোনারগাঁও হোটেলে যাবেন। সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন। ওইদিন বিকালে মোদি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অতিথিদের সঙ্গে তিনি সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। এর পর মোদি যাবেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মিলে বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘরের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন মোদি।
২৭ মার্চ সকালে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিস্থলে যাবেন। এর পর যাবেন ওড়াকান্দিতে। ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। এর পর প্রথমে দুই নেতা একান্তে বৈঠক করবেন। পরে বিকাল ৪টায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। বৈঠক শেষে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা। সেখান থেকে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মোদি। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে দুদিনের সফরে ২৬ মার্চ ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
শ্যামনগর ও ওড়াকান্দি সফর প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন বলেন, ওখানকার অনেক লোক পশ্চিমবঙ্গে আছেন। এ জন্যই তিনি ওইসব এলাকায় যাবেন।
Leave a Reply