1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

করোনা আতঙ্ক : প্রমোদ তরীর ছোট্ট কেবিন থেকে দু্ই প্রত্যক্ষদর্শীর করুণ আর্তি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে জীবনের সমস্ত সম্বল একত্র করে বিলাসবহুল এক মস্ত ক্রুজ জাহাজ (প্রমোদ তরীতে) বেড়াতে গিয়েছিল আমার দুই অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু, জেফ ও ডেভিড। ক্যানাডার টরন্টো-নিবাসি জেফ ঠিক করেছিল, এখন থেকে দেশ-বিদেশ ঘুরবে। সঙ্গে বন্ধু ডেভিড। দুজনে ১৮ জানুয়ারি টরন্টো থেকে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছে ইয়োকোহামা থেকে ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ বলে একখানা মস্ত জাহাজে হংকং রওনা হয়েছিলেন চাইনিজ নিউ ইয়ার পালন করতে। কথা ছিল হংকং, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম হয়ে জাহাজটি ১৫ দিন পরে ফিরবে ইয়োকোহামায়। জাহাজে রয়েছেন আন্দাজ ২,৬০০ যাত্রী, এবং ১,০০০-এরও বেশি কর্মী।

ইতিমধ্যে পৃথিবী-জুড়ে সাঙ্ঘাতিক আকার ধারণ করল এক মারাত্মক এবং দুরারোগ্য অসুখ, নভেল করোনাভাইরাস। গত সোমবার, অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি, সফর-ফেরত ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’কে ইয়োকোহামা বন্দরে ঢুকতে দেয়া হলো না। বন্দর থেকে কিছু দূরে নোঙর ফেলল জাহাজ। যাত্রীদের পরীক্ষা করতেই একের পর এক সংক্রমণ ধরা পড়ল।

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ১৩০ ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত সাতজন কানাডার নাগরিক। এখনকার পরিস্থিতি হলো, দু’হাজারের বেশি নানা দেশের যাত্রীর মতো জেফ আর ডেভিডও আটকে তাদের ছোট কেবিনের ভেতর, আরও অন্তত ১৫ দিনের জন্য। এবং চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আক্রান্ত আপাতত রয়েছেন এই জাহাজে।

আমি যখন তাদের ফোন করি, মোটামুটি হাশিখুশিই দেখাচ্ছিল দুজনকে। “আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের ঘরের সঙ্গে একটা লাগোয়া ডেক আছে, তাই একটু আলো-হাওয়া পাচ্ছি। হাজারো যাত্রীদের ঘরে শুধুমাত্র একটা জাহাজের গোল জানলা। ঘর থেকে এক পা’ও বেরোনো বারণ। ঘরে নক্‌ করে মুখে মাস্ক পরে খাবার, পানি দিয়ে যাচ্ছেন জাহাজের কর্মীরা, দিনে তিনবার। টিভি আর ইন্টারনেট আছে ঠিকই। কিন্তু ঘরে কার্যত বন্দি অবস্থায় তারিখ-সময়-দিন-রাতের হিসেব গুলিয়ে ফেলছি আমরা,” বলছে জেফ। অনির্দিষ্টকালের জন্য ভাসমান এই জাহাজকে কোনো দেশেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত যাত্রীরা।

ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে ৮০০’র বেশী মানুষ মারা গেছেন, আক্রান্ত ৪০ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা ২০০২-এর সার্স (SARS) মহামারীকে ছাপিয়ে গেছে এই ক’দিনেই। সম্প্রতি মহামারীর কেন্দ্রবিন্দু চিনের উহান শহরে মারা গেলেন একজন আমেরিকান নাগরিক। ক্যানাডায় এখনো মৃতের সংখ্যা এক, যদিও এখন পর্যন্ত চারজন আক্রান্ত।

কিন্তু সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনা হলো, এই রোগের ফলে কানাডায় চীনা বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে দেখা দিয়েছে তীব্র বর্ণ-বৈষম্য। রাস্তায়, দোকানে, মল-এ, দৃষ্টিকটু ভাবে চীনাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন অন্য নাগরিকরা। সাধারণভাবে মানুষের ঢলে থিকথিক করা চীনাবাজার এখন জনমানবশূন্য। মল-এ জামাকাপড়ের দোকানে একজন তো বলেই ফেললেন এক চীনা গ্রাহককে, “এই, তুমি এইসব জামাকাপড়ে হাত দিও না তো।” সেদিন ডাক্তারখানায় এক চীনা পরিবার হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে বলল, “স্যানিটারি ওয়াইপস আছে?” চোখমুখ দেখে মনে হলো, তারা অত্যন্ত উত্ত্যক্ত ও বিভ্রান্ত।

ইতিমধ্যে, শুক্রবার প্রায় ২০০ কানাডিয়ান উহান থেকে দুটি চার্টার্ড প্লেনে করে অবতরণ করেছেন ট্রেন্টন নামে একটা জায়গায়, যেখানে রয়েছে কানাডিয়ান আর্মড্‌ ফোর্সের বেস। সেখানে তাদের সঙ্গরোধ (quarantine) করে রাখা হয়েছে। উহান থেকে আসার পথে এরই মধ্যে তিনবার তাদের পরীক্ষা করা হয়ে গিয়েছে। আরো দু-সপ্তাহ সঙ্গরোধ করে রাখা হবে তাদের, দেখা হবে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না।

ওদিকে জেফ আর ডেভিড যে কবে বাড়ি ফিরবে, তার কোনো ঠিক নেই। আর দেশে ফিরলেও কতদিন তাদের সঙ্গরোধ করে রাখা হবে কে জানে। কোয়ারান্টিনে থাকতে থাকতে, এবং অসহায়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের সহযাত্রীরা, দাবি করছেন যেন জাহাজের প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়।

এতদিন যা অনর্থ ঘটত, তা অন্যদের ক্ষেত্রে হতো। কিন্তু এই অনর্থ একেবারে আমার দোরগোড়ায় হানা দিয়েছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com