1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস : প্রথম রোগী শনাক্তের ১ বছর পর পরিস্থিতি এখন কেমন?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

৮ মার্চ ২০২০। ওই দিন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথমবারের মতো জানানো হয় বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে একজন নারী এবং দু’জন পুরুষ। এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে এক বছর।

ভয়াবহ এক বছর মানুষের জীবনকে করেছে বিপর্যস্ত। প্রথম দিকে মানুষের ছিল উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য না থাকা, গুজব, কোনো ওষুধ বা টিকা না থাকা সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা।

অন্যান্য দেশের মতো জাতিসঙ্ঘের নির্দেশে মানুষের শুধু করণীয় ছিল বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

বাংলাদেশ সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় মার্চ মাসের ১৭ তারিখে।

এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক বছরের বেশি সময় পর এখন খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার দাবি করছে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এই এক বছরে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলতা দেখিয়েছে।

২২ মার্চ, বাংলাদেশ সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল যা পরবর্তীতে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

বাংলাদেশে ‘লকডাউন’ প্রয়োগের সময়টিকে সরকারিভাবে ‘সাধারণ ছুটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ‘সাধারণ ছুটি’র মধ্যে সারা দেশেই জরুরি সেবা, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ইত্যাদি অতি-প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো ছাড়া গণপরিবহনও বন্ধ ছিল। দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল।

বিভিন্ন দেশের মতো দেশজুড়ে অবরুদ্ধকরণ না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের ওপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল।

সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একই সাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।

সর্বোচ্চ আক্রান্তের সময়
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অঙ্কের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ধারণা করা হচ্ছিল শীতকালে ভাইরাসের প্রকোপ আরো বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টা। নভেম্বরে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরে উঠলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত পড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে, দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিন শ’ জনেরও কম।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস পরিস্থিতি :
৮ মার্চ ২০২০ থেকে ৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশে

মোট আক্রান্তের সংখ্যা- পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ জন
মৃত্যু- আট হাজার ৪৫১ জন
সুস্থ- পাঁচ এক হাজার ৯৬৬ জন
পরীক্ষা-৪১ লাখ ৩২ হাজার ১১৩ জন
তথ্য: স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সরকারের প্রস্তুতি :
সরকার বলছে চীনের উহানে এই রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই তারা প্রস্তুতি নিতে থাকে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. আলমগীর হোসেন বলছিলেন আঞ্চলিকভাবে সরকার এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে বিবেচনায় ধরলে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো’।

তিনি বলেন, চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানোর পর বাংলাদেশের আইইডিসিআর সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি বৈঠক করে ২০ জানুয়ারি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যাতে করে ২১ জানুয়ারি থেকে যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসবে সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

এ ছাড়া বিমানবন্দরে হেলথ কার্ড দেয়া হয়। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের এটি ফর্মে বিস্তারিত তথ্য নেয়া এবং বাংলাদেশে তাদের মোবাইল নম্বর নেয়া হয়। মার্চের শুরুতেই সরকার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে।

আলমগীর হোসেন বলছিলেন, ‘কোন দেশ কোন মেডিসিন ব্যবহার করছে সেটা জানা, ডব্লিউএইচও-এর সাথে যোগাযোগ এই বিষয়গুলো করা হচ্ছিল। কারণ প্রথম দিকে সবার কাছেই এই রোগটি ছিল অপিরিচিত’।

জাতীয় প্রস্তুতি পরিকল্পনা :
রাজধানী ঢাকা থেকে একেবারে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা, হাসপাতাল প্রস্তুত করা, প্রচার প্রচারণা চালানো এ ধরণের বিভিন্ন কাজের জন্য পরিকল্পনা করা হয়।

আলমগীর হোসেন বলছিলেন, ‘ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ এ সময়টাতে ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই শক্তিশালী। তবে মাঝখানে সেটা কিছুটা ঢিমেতালে হয়েছে’।

তিনি বলছিলেন, শক্তভাবে এ ব্যবস্থাপনাটা না করতে পারলে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারতো।

তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকারের যে হিসাব, সেটা নিয়ে যে বিতর্ক আছে সেটাকে তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, প্রত্যেকটি মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে হাসপাতালগুলোতে। তাই এখানে বির্তক তৈরি হওয়ার অবকাশ নেই।

আবহাওয়া :
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সরকারের এই দাবিকে ঢালাওভাবে মানতে রাজি নন।
তারা বলছেন, কয়েকটি বিষয় এখানে কাজ করেছে যাতে করে মানুষের মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা কম হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশের আবহাওয়া। অন্যান্য শীত প্রধান দেশে করোনা যতটা বিস্তার লাভ করেছে বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়াতে আবহাওয়াগতভাবে বড় সুবিধা পেয়েছে।

বয়স্ক জনগোষ্ঠী
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বয়স্ক ব্যক্তিরা। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে মানুষের গড় আয়ু বেশি। সেখানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। তাই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হয়েছে।

কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কম। তাই যে জনগোষ্ঠীর মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা সেই জনগোষ্ঠীর মানুষ তুলনামূলক কম। আক্রান্তের সংখ্যাও কম।

সরকার করোনাভাইরাসের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে সংখ্যা দিচ্ছে সেটা নিয়ে মতভেদ রয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা মনে করছেন না সরকারের ব্যবস্থাপনার কারণে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

একাধিক বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার সব সময় চেষ্টা করেছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে।

তারা দাবি করছেন এই সংখ্যাটা ৮ থেকে ১২ গুন বেশি। এই সংখ্যা কম দেখানোর পিছনে সরকারের বহিবিশ্বে ভাবমূর্তির বিষয় রয়েছে আর রয়েছে তাদের ব্যর্থতা ঢাকার। এখানে তারা দুইটা বিষয়কে উল্লেখ করেছেন।

১. চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করার অন্তত ১৫ দিনের মধ্যে চীনের সাথে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া উচিৎ ছিল। একই সাথে বিদেশ থেকে যারা এসেছে সঠিক নিয়মে কোয়ারেন্টিন এবং সংশ্লিষ্ট সব কিছু বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে করা উচিৎ ছিল।

২. মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যাপক প্রচরাণার দরকার ছিল। সেটা হয়নি। মানুষ এই রোগের ভয়াবহতা বুঝতে পারেনি। যার ফলে মানুষের এখন টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে নজির আহমেদ বলছেন, আপতদৃষ্টিতে এটা একটা সফলতা হিসেবে দেখা হলেও এই করোনাভাইরাস বাংলাদেশে কীভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে সেটা বিভিন্ন দিক থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।

১. দুর্বল পরীক্ষা :

করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। যেমন একটা বাসায় যদি একজনের করোনাভাইরাস হয় সেই বাসার সবাইকে সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়নি।

২. উপসর্গবিহীন রোগী :

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এই সব রোগীরা হিসেবের বাইরে রয়ে গেছে।

৩. সোশ্যাল স্টিগমা :
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিনগুলোতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সোশ্যাল স্টিগমা ছিল। কোনো বাড়িতে কেউ আক্রান্ত হলে তাদের একঘরে করে দেয়া বা কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে। ফলে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও পরিবারের পক্ষ থেকে সেটা গোপন করা হয়েছে। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগীর লাশ কীভাবে শেষকৃত্য করতে হবে সেটা নিয়েও ছিল অস্পষ্টতা। এই মৃত্যুগুলোর হিসাব হয়নি।

বে নজির আহমেদ বলেন, উহানে এই ভাইরাসটি চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রস্তুতি নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে, অন্য দেশকে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতি নেয়ার কাজে লাগাতে পারেনি।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com