দেওয়ানি মামলা বিচারের ক্ষেত্রে অধস্তন আদালতের বিচারকদের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বহুগুণ বাড়িয়ে সম্প্রতি আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনের মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক মূল্যমানের মামলার আপিল ও রিভিশন এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে। ওই সংশোধনের আগে কোনো সম্পত্তির আর্থিক মূল্যমান ৫ লাখ টাকার ওপরে হলেই বিচারপ্রার্থীকে হাইকোর্টে বিচার চেয়ে আবেদন করতে হতো। আইন সংশোধনের পর এখন কোনো সম্পদের আর্থিক মূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি হলে বিচার চাইতে হবে হাইকোর্টে। আর এ কারণেই হাইকোর্টে দেওয়ানি বিষয়াদি বিচারের ক্ষেত্রে আর্থিক এখতিয়ার সমন্বয় করতে হাইকোর্ট রুলস সংশোধন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি কাজও করছে।
জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গতকাল সোমবার আমাদের সময়কে বলেন, ‘দ্য সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট ডিভিশন রুলস কমিটির বৈঠক হয়েছে।’ তবে বৈঠকের বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেননি তিনি। তবে হাইকোর্ট ডিভিশন রুলস কমিটির এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘হাইকোর্ট রুলস সংশোধনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এই সংশোধনীর বিষয়ে একটি সুপারিশ করা হয়েছে, তা এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে।’
জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের সভাপতিত্বে চার সদস্যের এই রুলস সংশোধন কমিটিতে রয়েছেন বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া, বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান।
এর আগে ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ১৮৮৭ সালের দেওয়ানি আদালত আইন সংশোধন বিল পাস করে অধস্তন আদালতে দেওয়ানি মামলা বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকদের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ানো হয়। আইনের নতুন বিধান অনুযায়ী একজন সহকারী জজ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের (সম্পত্তি বা অর্থে যে অঙ্কের টাকা নিয়ে বিরোধ) মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবেন। আগে এই এখতিয়ার ছিল ২ লাখ টাকা। একইভাবে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজের বিচারিক এখতিয়ার চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা। ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের মামলার বিচার করবেন সিনিয়র সহকারী জজ। আর আপিল ও রিভিশন শুনানির ক্ষেত্রে জেলা জজের এখতিয়ার পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করা হয়েছে। যুগ্ম জেলা জজকে বিচারিক এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে ২৫ লাখ থেকে তদূর্ধ্ব পর্যন্ত।
পাস হওয়া বিলে পাঁচ কোটি টাকার কম মূল্যমানের কোনো মামলায় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল বা কার্যক্রম হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন থাকলে তা জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরের বিধান রাখা হয়েছে। আগে পাঁচ কোটি টাকার কোনো আপিল হলে হাইকোর্টে যাওয়া লাগলেও আইন সংশোধনের ফলে জেলা জজ সেই আপিল শুনানি করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আইন সংশোধন করে অধস্তন আদালতের বিচারিক এখতিয়ার বৃদ্ধি করায় হাইকোর্ট রুলস সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ হাইকোর্ট রুলসের চ্যাপটার ২-এর রুল-১ (অ্যাক্ট) (এ)-তে বলা আছে, হাইকোর্টের একক বেঞ্চের আপিল ও রিভিশন শুনানির এখতিয়ার ৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে দেওয়ানি আইন সংশোধন করে জেলা জজকেই ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলার আপিল ও রিভিশন শুনানির এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আর এই বিশাল অঙ্কের আর্থিক এখতিয়ার বৃদ্ধি করায় এখন অনেক দেওয়ানি মামলা আর বিচারের জন্য হাইকোর্টে আসবে না। অধস্তন আদালতেই এর বিচার করা যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, সরকার আইন সংশোধন করে অধস্তন আদালতের এখতিয়ার বাড়িয়েছে। আগে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়ানি এখতিয়ারসম্পন্ন একক বেঞ্চের আর্থিক এখতিয়ার ছিল ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। এখন যেহেতু অধস্তন আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বেড়েছে, সে কারণে হাইকোর্টের দেওয়ানি মামলার বিচারের এখতিয়ারসম্পন্ন একক বেঞ্চের আর্থিক এখতিয়ার বাড়াতে হবে। এ জন্যই রুলস সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে।
Leave a Reply