দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন চা শিল্পের ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী দীর্ঘকালের পথপরিক্রমায় প্রাকৃতিক আশ্রয়ে গড়ে ওঠা পাহাড় ও সমতলভূমির ওপর ছোট শহর শ্রীমঙ্গল। চারদিকে সবুজের সমারোহ। পাহাড় ও চাবাগান বেষ্টিত মুছাই এলাকা। পাহাড় ও চাবাগানের বুক চিরে বয়ে গেছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক।
চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলার নৈসর্গকে আরও আকর্ষণীয় ও চাশ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানাতে শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বার মুছাই এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘চাকন্যা’র ভাস্কর্য। চোখ জুড়ানো এ ভাস্কর্য প্রতিদিন অবলোকন করেন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক। ফলে অরণ্যভূমি মুছাই দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সীমান্তে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মুছাই বাজারের অদূরে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু করা হয় চাকন্যা ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির প্রধান প্রকৌশলী সঞ্জিত রায় দীর্ঘ প্রায় তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাতগাঁও চাবাগানের অর্থায়নে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ ভাস্কর্য। এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। ২৪ ফুট উঁচু এ ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চাশ্রমিক নারীর নিপুণ হাতে পাতা চয়নের মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি। এ ভাস্কর্যটি শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটককে এর সৌন্দর্য উপভোগ ও পাদদেশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়।
‘চায়ের দেশে স্বাগতম’ শিরোনামের ভাস্কর্যটি দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সবার দৃষ্টি কেড়ে চলেছে। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ এবং সর্বাধিক চাবাগান বেষ্টিত এলাকা শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে স্থাপিত নারী চাশ্রমিকের চাপাতা উত্তোলনের দৃশ্য সংবলিত ভাস্কর্যটি মুগ্ধ করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এই ভাস্কর্যের নিচে।
মৌলভীবাজার জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চাশ্রমিকদের অবদান এবং এ শিল্পের সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্কের কথা ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘চাকন্যা’ ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
সাতগাঁও চাবাগানের ব্যবস্থাপক বলেন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং সাতগাঁও চাবাগানের অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির ভাস্কর সঞ্জিত রায় এটি নির্মাণ করেন।
মৌলভীবাজার জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন ও চাশ্রমিকদের শ্রম-সাধনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে এই ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
Leave a Reply