দেশের দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলার মনভোলানো এক জনপদ মনপুরা। আর সেখানেই গড়ে উঠেছে প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের স্পট ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’। সাগর উপকূলের নয়নাভিরাম দ্বীপটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নান্দনিক এ পর্যটনকেন্দ্র।
সাগরের উত্তাল ঢেউ, গভীর বন আর সূর্যোদয়-সুর্যাস্তের দেখা মেলে এখানে। যেন সবুজে মোড়ানো চারদিক। সাগর পাড়ে লাল কাঁকড়ার ছন্দ মেলে ঘোরাফেরা। এমন এক নান্দনিক সৌন্দর্য বারবার আকর্ষণ করে পর্যটকদের। আর সে কারণেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
এদিকে গত ৬ জানুয়ারি ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’ উদ্বোধন শেষে পর্যটন স্পটটির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। এর মধ্য দিয়ে জনসাধারণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় পর্যটনকেন্দ্রটি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার মনপুরা উপজেলার সৌন্দর্য দেশব্যাপী পরিচিত। নতুন করে এখানেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে দখিনা হাওয়া সি বিচ। এটি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে সাগর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত। এখানকার সৌন্দর্যে ও সম্ভাবনা দেখেই আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে ছাতা, চৌকি, ছাউনি ও ওয়াশ জোনসহ নানা স্থাপনা বসানো হয়েছে। সাঁতার কাটার আয়োজনের পাশাপাশি ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে স্পিড বোটের ব্যবস্থা।
পর্যটক আনিসুর রহমান টিপু বলেন, দখিনা হাওয়া সি বিচের নাম শুনে এর আগে আমি একবার এসেছিলাম। এবার পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। সত্যি অনেক ভালো লাগছে।
ঘুরতে আসা পর্যটক শাওন ও মামুন বলেন, এখানে এসে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মতোই দেখতে ‘দখিনা হাওয়া সি বিচ’। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ জুয়েল বলেন, প্রতিদিন দখিনা হাওয়া সি বিচে মানুষের সমাগম হয়, তবে শুক্র ও শনিবার অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। তবে এখানে যদি থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তা হলে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
নতুন এ সি বিচ ঘিরে এলাকাকে পর্যটকমুখী করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ কাজল বলেন, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার মতোই ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় স্থান দখিনা হাওয়া বিচ। এর একপাশে সাগর ও অন্য তিন দিকে বনভূমি। যার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন দর্শনার্থীরা। সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় এখানে বসেই। এ পর্যটনকেন্দ্রটিকে আরও সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কাজ করছি।
মনপুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, এ বিচটিকে ট্যুরিজমের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা চেষ্টা করছি। এ সি বিচকে আরও সৌন্দর্যবর্ধন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পর্যটন করপোরেশন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি, আশা করি খুব শিগগিরই বিষয়টি তারা দেখবেন। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরও বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে। আমরা সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি।
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খুব শিগগিরই স্পটটি সরেজমিন গিয়ে দেখব এবং যদি পর্যটন স্পটের সম্ভাবনা থাকে তা হলে আমরাও সুপারিশ করব। এ ছাড়া পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টিও দেখা হবে।
যেভাবে যাওয়া যাবে দখিনা হাওয়া সি বিচে : ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়া কিংবা মনপুরাগামী লঞ্চে উঠতে হবে। এর পর মনপুরা ঘাটে নেমে অটোরিকশা বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ‘দখিনা হাওয়া সি বিচে’। এ ছাড়া ভোলার তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলা থেকেও লঞ্চ বা স্পিড বোটে যাওয়া যাবে ওই বিচে।
Leave a Reply