সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছেই মিয়ানমারে। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাধারণ নাগরিক ও পেশাজীবীরাও। কয়েকটি বড় শহরের মেডিকেল স্টাফরা আজ থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে অধিকারকর্মী ও দলীয় নেতাকর্মীরা গণঅসহযোগের আহ্বানে প্রচারণা চালাচ্ছে। ইয়াঙ্গুনে রাতের রাস্তায়, অলিতে-গলিতে মানুষজন বিভিন্ন পাত্র, হাঁড়িপাতিল, কড়াই বাজিয়ে, গাড়িতে হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। তবে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে সোমবার ভোরে সেনাবাহিনী আটক করার পর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি। খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ভোরের অভ্যুত্থানে কমপক্ষে ১০০ আইনপ্রণেতাকে রাজধানী ন্যাপিডতে তাদের বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সেনারা। তবে শেষ খবরে বলা হয়েছে, তারা চাইলে বেরিয়ে যেতে পারেন।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে সোমবার ভোরে অং সান সুচিকে আটক করে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ওই নির্বাচনে সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) শতকরা ৮৩ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়। সোমবার নতুন সরকারের প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘন্টা আগেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে সেনারা। এরপর তারা নতুন একটি নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের প্রধান পদে নতুন নিয়োগ দিয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার দৃশ্যত শান্ত রয়েছে। সেনারা বড় বড় শহরে টহল দিচ্ছে। রাতের বেলায় কারফিউ বহাল রয়েছে। বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা মঙ্গলবার সকালে চালু করা হয়েছে। কিন্তু এদিন সন্ধ্যা নামতেই গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকেন চালকরা। ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সাধারণ মানুষকে রান্নার বাসনপত্র বাজিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। যুব সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপ গণঅসহযোগের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন প্রচারণায় ফেসবুক পেইজে কমপক্ষে এক লাখ লাইক পড়েছে। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বলেছেন, অং সান সুচিকে মুক্ত করতে আজ বুধবার থেকে তারা কাজ থেকে বিরত থাকবেন। অনেক চিকিৎসক নীরবতার প্রতীক ধারণ করার কথা বলেছেন। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে কমপক্ষে একজন ডাক্তার পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, এমন অভ্যুত্থান মেনে নেয়া যায় না। তিনি হলেন সাগাইং রিজিয়নের মোঙ্গিওয়া হাসপাতালের এনেস্থেসিওলজিস্ট ৪৭ বছর বয়সী ডাক্তার নাইং হটু অং। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে কাজ করবো না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। এই স্বৈরাচার দেশ এবং দেশের মানুষের কোনো তোয়াক্কা করে না। তাই আমার পক্ষ থেকে সর্বোত্তম প্রতিবাদ জানিয়েছি। আরেকজন ডাক্তার মিও থেট ওও বলেছেন, একজন স্বৈরাচার এবং অনির্বাচিত সরকারকে মেনে নিতে পারি না। তারা যেকোনো সময় আমাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাসপাতালে যাবো না।
ওদিকে দেশের ক্ষমতা তুলে দেয়া হয়েছে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। অর্থ, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সহ কমপক্ষে ১১টি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক করেছেন সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইং। তিনি বলেছেন, অভ্যুত্থান অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।
Leave a Reply