রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ভেজাল মদ তৈরির কারখানার সন্ধানসহ বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদ ও মদ তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ডিবির দাবি, চক্রের সদস্যরা মদের উপাদান ইথানলের (ইথাইল অ্যালকোহল) পরিবর্তে বিষাক্ত মিথানল (মিথাইল অ্যালকোহল) মেশায়। যে কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
এদিকে, বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ আরও দুজন সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে গত রবিবার থেকে সেখানে মৃত্যু হলো ১১ জনের। এ ঘটনায় ৩ অ্যালকোহল বিক্রেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, মদপানের পর মূলত দুটি কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। প্রথমত মদে নেশার উপাদান ইথাইলের পরিবর্তে মিথাইল মেশানোর কারণে। মিথাইল কিডনি ও লিভার দ্রুত বা ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট করে দিতে পারে। যারা রাতে মদপানের কারণে সকালে মারা গেছেন, তারা ভেজাল মদে এই মিথাইল সেবনের শিকার হয়েছেন, এমনটিই ধারণা আ ব ম ফারুকের। ইথাইলের পরিবর্তে মিথাইল মেশানোর কারণ হিসেবে দাম কম বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেকে আছে মদের সঙ্গে ঘুমেরসহ বিভিন্ন
ধরনের ওষুধ সেবন করেন। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ভেজাল মদ তৈরির অপরাধে ডিবির হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ, রেদুয়ান উল্লাহ, সাগর ব্যাপারী, নাসির আহমেদ রুহুল, জাহাঙ্গীর আলম এবং সৈয়দ আল আমিন। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনে রাজধানীর ভাটারা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় মদ সেবনের কারণে অসুস্থ হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। ডিবির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এতে ভেজাল ও অবৈধ মদ তৈরি-বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এই চক্রের মূল হোতা নাসির দীর্ঘদিন ধরে মদ বিক্রি করে আসছে। মাঝে মাঝে একটি মদের বোতল খুলে ২/৩ বোতল তৈরি করত। সম্প্রতি ওয়্যার হাউসগুলোয় মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এরা নকল মদ তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। আর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের আশপাশ এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রঙ সংগ্রহ করে, চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে নকল মদ তৈরি করে।
রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশ এবং ইংলিশ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের নাম দিয়ে মূলত স্পিরিট, রং আর পচা পানির এই বিষাক্ত মদের কারখানার ‘চিফ কেমিস্ট’ জাহাঙ্গীর আলম। সে একসময় ভাঙ্গাড়ির দোকানের কর্মচারী ছিল। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিটফোর্ডে বিক্রি করত। নিরক্ষর এ দোকানদার এখন ‘বিদেশি’ মদ তৈরির কারখানার ‘প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা’।
Leave a Reply