1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধে অনীহা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তার বেশির ভাগই পরিশোধ করছেন না। ঋণ পরিশোধ না করার জন্য সর্বদাই তারা নানা ফাঁকফোকর খুঁজতেই ব্যস্ত থাকেন। ফলে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরে বড় উদ্যোক্তাদের বৃহৎ শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ। যেখানে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। বড় উদ্যোক্তাদের খেলাপি ঋণের ভারে পুরো ব্যাংকিং খাতেই এখন দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংকই প্রকৃত নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারছে না। চলতি মূলধনের জোগানও দিতে পারছে না অনেক প্রকৃত উদ্যোক্তাকে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নানা প্রভাব খাটিয়ে বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেন। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঋণের বড় অংশ ফেরত পাওয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানায় যারা আছেন তারা নামে বেনামে সাধারণ আমনতকারীদের অর্থ ঋণ আকারে বের করে নিচ্ছেন। কিন্তু তা পরিশোধ করছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে হিসেবের মারপ্যাঁচে ওই ঋণ খেলাপি আকারেও দেখানো হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। আবার নানা পরিস্থিতির কারণে ওই সব পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, কোনো কথাও বলতে পারছেন না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আবার অন্য বড় উদ্যোক্তাদের মধ্যেও ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নানা কারণে এসব ঋণখেলাপির সুবিধা দিতে সময়ে সময়ে নীতিসহায়তা দিয়ে আসছে। যেমন, ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। মাত্র ২ ও ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ও ১ হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিদের ঋণ নবায়ন করা হয়। এ ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়ে মাত্র ১৪টি শিল্প গ্রুপ ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করে নেয়। ঋণখেলাপিদের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে আবারো ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেন এসব উদ্যোক্তা। কিন্তু আগের ঋণ আর পরিশোধ না করায় ওই ঋণ এখন আবারো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন সময় বিনা ডাউন পেমেন্টেও ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী বছরে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সুদহারেও ছাড় দেয়া হয়। অর্থাৎ বেশি সুদে ঋণ নিলেও এ সুবিধার আওতায় এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেই এ রকম আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান গতকাল এ বিষয়ে  জানান, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়নের জন্য গত বছর ২ হাজার ৮০০ আবেদন পড়ে সোনালী ব্যাংকে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৮৫টি আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ১০ বছরের জন্য ২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার মন্দমানের খেলাপি ঋণ এ সুবিধার আওতায় নবায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে মেয়াদি শিল্পে ঋণের মধ্যে বৃহৎ শিল্পে খেলাপি ঋণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বৃহৎ মেয়াদি শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ, যেখানে মাঝারিতে সোয়া দুই শতাংশ এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ শতাংশ কমেছে। আবার মেয়াদি ও চলতি মিলে ২০১৮ সালে বৃহৎ শিল্পে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, সেখানে এক বছরের ব্যবধানে গত বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সবমিলে বৃহৎ শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ, যেখানে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ শতাংশ করে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতার অন্যতম কারণ হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ঘন ঘন নীতিমালা শিথিল করা। নানা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেন বড় উদ্যোক্তারা। আর তা পরিশোধ না করে বরং নানা ফাঁকফোকর খোঁজেন কখন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণেই ঋণ পরিশোধ না করেই বছরের পর বছর পার পেয়ে যান এসব অসাধু ঋণগ্রহীতা।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গতকাল জানান, বড় ঋণগ্রহীতারা তদবির করে নয়, প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। আর সেই ঋণ আর পরিশোধ না করে বছরের পর বছর পার পেয়ে যান। তিনি জানান, এবি ব্যাংক এসব ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি একমত নন। কারণ ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে একজন বড় ঋণখেলাপিকে ঋণ নবায়ন করা হলো, কয়েক দিন পর ওই ঋণখেলাপি আর ঋণ পরিশোধ করলেন না। আবার অন্য ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ নিয়ে আবার ঋণখেলাপি হলেন। তাই এটার সাথে তিনি একমত নন। দুই শতাংশে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে তিনি আগে ঋণখেলাপির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করছেন। এ কারণে খুব কমই এ সুবিধার আওতায় ঋণ নবায়ন করেছে তার ব্যাংক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com